কবুতরের গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:
কবুতরের অনেক রোগ বালাই রয়েছে। আমরা তা নিম্নে ছক আঁকারে দেখালামঃKey Of This Article:
- বিভিন্ন রোগ
- সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস
- করাইজা অথবা আউল’স হেড
- মাইকোপ্লাজমোসিস
- ক্ল্যামাইডিওসিস অথবা অরনিথোসিস
- নিউক্যাসল অথবা প্যারামিক্সো ভাইরাস-১
- ডিফথেরো স্মল পক্স (বসন্ত রোগ)
- পরজীবী রোগ
- এমাইনো এসিড
- অপুষ্টিজনিত ও বিপাকীয় রোগসমূহ
- ভিটামিন এ এর ঘাটতি
- ভিটামিন ডি এর ঘাটতি
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন কে
- ভিটামিন বি১
- ভিটামিন বি৬
- ভিটামিন বি২
- ফলিক এসিড
- ম্যানটোথেনিক এসিড
- বায়োটিন
বিভিন্ন রোগ ও লক্ষন সাথে তার প্রতীকার সহ চিকিৎসাঃ
রোগের নাম | কারণ | লক্ষণ | চিকিৎসা | প্রতিরোধ |
সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস | সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম | শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো, ফেনা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়। দেহ ক্রমাগত শুকিয়ে যায়। ভারসাম্য হীনতা ও পক্ষাঘাত পরিলক্ষিত হয়। | এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে। | ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
পাসটিউরেলা মালটোসিডা | ডাইরিয়া, জ্বর (৮২-৮৩০ ঈ) কোন লক্ষণ ব্যতীত ২৪-৪৮ ঘন্টা মধ্যে কবুতর মারা যায় | এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে। | ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
করাইজা অথবা আউল’স হেড | হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা | সর্দি, চোখের পাতাদ্বয় ফুলে প্যাঁচার মাথার ন্যায় দেখায়, অক্ষিঝিলি্ল প্রদাহের ফলে চোখ দিয়ে (muco-purulent) পদার্থ নির্গত হয়। | এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে। | ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
মাইকোপ্লাজমোসিস | মাইকোপ্লাজমা কলাম্বিনাম | সর্দি, চোখ ও নাক দিয়ে প্রথমে পানি এবং পরে muco-purulent পদার্থ নির্গত হয়। মুখ ও কন্ঠ অত্যধিক প্রদাহে স্ফীত থাকে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। | টিয়ামুলিন, টাইলোসিন এনরোফ্লুক্সসিন, স্পাইরামাইসিন, লিনকোমাইসিন গ্রুপের ঔষধ | ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
ক্ল্যামাইডিওসিস অথবা অরনিথোসিস | ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি | চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে, স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং রোগ ভোগের পর মরা যায় | ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন, টাইলোসিন, লিনকোমাইসিন, স্পাইরামাইসিন ইত্যাদি | ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
নিউক্যাসল অথবা প্যারামিক্সো ভাইরাস-১ | প্যারামিক্সো ভাইরাস টাইপ-১ | সবুজ রংয়ের ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মুখ হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা, পাখা ও পায়ের পক্ষাঘাত ইত্যাদি। | এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন, ইমিউনো স্টিমুলেটর | * জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। * টিকা প্রদান করতে হবে। |
ডিফথেরো স্মল পক্স (বসন্ত রোগ) | বোরেলিয়া কলাম্বরী ভাইরাস | পালকহীন ত্বক বিশেষ করে চোখ, ঠোঁটের চারপাশে এবং পায়ে ক্ষত বা পক্স দেখা যায় | এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন এ এবং সি, ইমিউনো স্টিমুলেটর, টপিক্যাল আইওডিন | * জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। |
পরজীবী রোগ | আইমেরিয়া, এসকারিস, ক্যাপিলারিয়া, ট্রাইকোমোনা | দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, শুকিয়ে যাওয়া, ডাইরিয়া (মলে রক্ত থাকে ককসিডিয়া), পুষ্টিহীনতা ও অবশেষে মৃত্যু ঘটে। | কৃমিনাশক, ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স, এমাইনো এসিড | * জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। |
অপুষ্টিজনিত ও বিপাকীয় রোগসমূহ
ভিটামিন এ এর ঘাটতি | দেহে ক্ষত হয়, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় এবং অক্ষিঝিলি্লর প্রদাহ দেখা দেয়, ক্ষুধা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধি ও পালকের গঠণ ব্যাহত হয়, উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায় | ২০০ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন | নিয়মিত ভিটামিন, প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান অথবা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে। |
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি | অস্থি নরম ও বাঁকা হয়ে যায়, ডিম উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়, ডিমের খোলস পাতলা হয়। | ৪৫ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন | ভিটামিন ডি ও মিনারেল প্রিমিক্স প্রদান, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (কডলিভার অয়েল, ফিস মিল) প্রদান করতে হবে। |
ভিটামিন ই | এনসেফালোম্যালাশিয়া রোগ হয়, পক্ষাঘাতের ফলে চলতে অসঙ্গতি দেখা দেয়। বুক ও পেটের নীচে তরল পদার্থ জমে, ইডিমা হয়। ডিমের উর্বরতা কমে যায়। | ১ মিগ্রা | সেলিনিয়াম সহ ভিটামিন ই প্রদান করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার (শস্য দানা, গম, চাউলে কুড়া, শুটকি মাছ) খাওয়াতে হবে। |
ভিটামিন কে | রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। | —— | ভিটামিন কে প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (সবুজ শাকসবজি ও মাছের গুঁড়া)। |
ভিটামিন বি১ | পা, ডানা ও ঘাড়ে পক্ষাঘাত হয়। ঘাড়ের পক্ষাঘাতের ফলে ঘাড় পেছন দিকে করে আকাশের দিকে মুখ করে থাকে, চলনে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। | ০.১ মিগ্রা | ভিটামিন বি১ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান (চাউলের কুড়া, গমের গুঁড়া, শাক সবজি) |
ভিটামিন বি২ | ছানার পা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। পরে নখ বা আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। ছানার দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। | ০.১২ মিগ্র | ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (সবুজ শাক সবজি, ছোলা, খৈল, আলফা-আলফা, ঈষ্ট) |
ভিটামিন বি৬ | ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। ছানার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্যারালাইসিস ও পেরোসিস হতে পারে। | ০.১২ মিগ্রা | ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (শস্য, মাছের গুঁড়া, আলফা-আলফা, ঈষ্ট ইত্যাদি) |
ভিটামিন বি১২ | বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ডিমের উর্বরতা হ্রাস পায়। | ০.২৪ মিগ্রা | ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, মাংস ফিসমিল ইত্যাদি) |
ফলিক এসিড | রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও পালক কম গজায়। | ০.০১৪ মিগ্রা | ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও সাথে ম্যানগানিজ (সহ) প্রদান করতে হবে। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, ঈষ্ট) |
ম্যানটোথেনিক এসিড | বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও চর্ম রোগ হয়। পা ও চোখের চারিপাশে নেক্রোসিস হয়। ডিমের উর্বরতা হ্রাস। | ০.৩৬ মিগ্রা | প্যানটোথেনিক এসিড সমৃদ্ধ ভিটামিন প্রদান (চীনাবাদাম, আখের গুড়, ঈষ্ট, চাউলের কুড়া, গমের ভূষি ইত্যাদি) |
বায়োটিন | পেরোসিস, ডিমের উর্বরতা হ্রাস ও চর্ম প্রদাহ দেখা দেয়। | ০.০০২ মিগ্রা | বায়োটিন সমৃদ্ধ ভিটামিন ও খাদ্য প্রদান। |
খনিজ পদার্থ (সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন, ম্যানগানিজ, কপার এন্ড কোবাল্ট, আয়রন | হাড় গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ডিমের খোসা নরম হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পেরোসিস ও প্যারালাইসিস হয়। | —– | পাখিকে নিয়মিত ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও খাদ্য প্রদান করতে হবে। |
এমাইনো এসিড
আমিষ বিভিন্ন প্রকার এমাইনো এসিড সরবরাহ করে যা দেহ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক। যে সব এমাইনো এসিড পাখির দেহে সংশ্লেষণ হয় না তাকে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বলে। সুতরাং পাখিকে এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য (শুটকি মাছের গুড়া, সরিষা, তিল ও চীনাবাদামের খৈল) সরবরাহ করতে হবে।অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের নাম মথিওনিন লাইসিন ভ্যালিন লউসি আইসো-লিউসিন ফিনাইল অ্যালানিন ট্রিপটোফেন আরজিন হিসটিডিন ফ্রিওনিন |
প্রতিদিনের প্রয়োজন ০.০৯ গ্রাম ০.১৮ গ্রাম ০.০৬ গ্রাম ০.০৯ গ্রাম ০.০৫৫ গ্রাম ০.০৯ গ্রাম ০.০২ গ্রাম |
উপসংহার
কবুতরের সাধারণত মুরগির থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এক জোড়া কবুতরের গড় উৎপাদন ক্ষমতা ৫-১২ বছর অথচ সেখানে মুরগির মাত্রা ১-১২ বছর হয়ে থাকে।
এ সমস্ত দিক বিবেচনা করে এটা সহজেই বলা যায় যে কবুতর পালন একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। মুরগির ন্যায় যদি কবুতরকে পারিবারিকভিত্তিতে ব্যাপকভাবে পালন করা যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অনেক বেশি সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা যায়। অবশ্য এই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া বিশেষ প্রয়োজন।