Sunday, February 18, 2018

কবুতরের প্রয়োজনীয় খাবার - Best Foods for Pigeons

কবুতর পালন

Pigeons Food


খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

বাচ্চা ফোটার ৪-৫ দিন পর কবুতরের বাচ্চার চোখ ফোটে। ফলে বাচ্চাগুলো কোন দানাদার খাদ্য গ্রহণ করতে পারেনা। এসময় স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর তাদের পাকস্থলী (ক্রপ) থেকে ঘন ক্রীম বা দধির মত নিঃসরণ করে যাকে কবুতরের দুধ বলে। এ দুধ অধিক আমিষ, চর্বি এবং খনিজ লবণ সমৃদ্ধ যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে পারে। বাচ্চাগুলো নিজে খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর উভয়ে দানাদার খাদ্যের সাথে দুধ মিশিয়ে ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়।
  • কবুতরের জন্য তৈরীকৃত খাদ্য শর্করা, আমিষ, খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, চর্বি এবং খনিজ লবণ সমপন্ন সুষম খাদ্য হতে হবে। কবুতর ম্যাশ বা পাউডার খাদ্যের তুলনায় দানাদার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে।
  • ছোট আকারের কবুতরের জন্য ২০-৩০ গ্রাম, মাঝারী আকারের জন্য ৩৫-৫০ গ্রাম এবং বড় আকারের জন্য ৫০-৬০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের মধ্যে গম, ধান, ভূট্টা, সরগম, ওট শতকরা ৬০ ভাগ এবং লেগুমিনাস বা ডাল জাতীয় খাদ্যের মধ্যে সরিষা, খেসারী, মাটিকলাই শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ সরবরাহ করতে হবে।
  • কবুতরের ভিটামিন সররাহের জন্য বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন ছাড়া সবুজ শাকসবজি, কচি ঘাস সরবরাহ করা প্রয়োজন।
  • প্রতিদিন ২ বার খাদ্য সরবরাহ করা ভাল। মাঝে মাঝে পাথর, ইটের কণা (গ্রিট) এবং কাঁচা হলুদের টুকরা দেয়া উচিৎ কারণ এ গ্রিট পাকস্থলীতে খাবার ভাঙতে এবং হলুদ পাকস্থলী পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • কবুতরের ডিম দেয়ার সময় গ্রিট মিশ্রণ বা খনিজ মিশ্রণ, ডিম এবং ডিমের খোসা তৈরী এবং ভাল হ্যাচাবিলিটির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এই খনিজ মিশ্রণ বোন মিল (সিদ্ধ) ৫%, ঝিনুক ৪০%, লাইম স্টোন ৩৫%, গ্রাউন্ড লাইম স্টোন ৫%, লবণ ৪%, চারকোল ১০% এবং শিয়ান রেড ১% তৈরী করতে হবে  ।


পানি সরবরাহঃ

প্রতিদিন গভীর বা খাদ জাতীয় পানির পাত্র ভালভাবে পরিষ্কার করে ৩ বার পরিষ্কার পরিচছন্ন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা উচিত। দুই সপ্তাহ পর পর পটাশ মিশ্রিত পানি সরবরাহ করলে পাকস্থলী বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।



Pigeon Home Making Design Method-(কবুতরের ঘর নির্মানের পদ্ধতি)

House of Pigeon

কবুতরের বাসস্থানঃ

কবুতরের ঘর
কবুতরের ঘর


উত্তম নিষ্কাশন, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং বায়ুচলাচল আছে এরূপ উঁচু এবং বালুময় মাটিতে কবুতরের ঘর করতে হবে, যা খামারীর আবাসস্থল থেকে ২০০-৩০০ ফুট দুরে এবং দক্ষিণমূখী হওয়া উচিত। মাটি থেকে ঘরের উচ্চতা ২০-২৪ ফুট এবং খাচার উচ্চতা ৮-১০ফুট হওয়া ভাল। একটি খামারের জন্য ৩০-৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ। এরূপ ঘরের মাপ হবে ৯ ফুট ৮.৫ ফুট। কবুতরের খোপ ২-৩ তলা বিশিষ্ট করা যায়। এরূপ খোপের আয়তন প্রতিজোড়া ছোট আকারের কবুতরের জন্য ৩০ সে. মি.x ৩০ সে.মি.x ২০ সে.মি. এবং বড় আকারের কবুতরের  জন্য ৫০ সে. মি.x ৫৫ সে.মি. x৩০ সে.মি.। ঘর স্বল্প খরচে সহজে তৈরী এবং স্থানান্তরযোগ্য যা কাঠ, টিন, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা যায়। খামারের ভিতরে নরম, শুষ্ক খড়-কুটা রেখে দিলে তারা ঠোঁটে করে নিয়ে নিজেরাই বাসা তৈরী করে নেয়। ডিম পাড়ার বাসা তৈরীর জন্য ধানের খড়, শুকনো ঘাস, কচি ঘাসের ডগাজাতীয় দ্রব্যাদি উত্তম। খোপের ভিতর মাটির সরা বসিয়ে রাখলে কবুতর সরাতে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায়।


কবুতরের ঘর
কবুতরের ঘর
ঘর তৈরির ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয়ঃ




  1. ঘরের মধ্যে জেনো পর্যাপ্ত আলো বাতাস আসা যাওয়া করতে পারে।
  2. ঘরের মধ্যে এমন কোন ফাকা জায়গা না থাকে যেখান থেকে ইঁদুর বেঁজি ইত্যাদি প্রাণী ঢুঁকে কবুতরের ক্ষতি করতে পারে।
  3. একটু বড় করে খোপ তৈরি করা যাতে কবুতর বাহীরে মিলন করতে সমস্যা হলে খোপের ভিতরেই মিলন করতে পারে। এতে করে আপনার প্রডাকশন বৃদ্ধি পাবে।


(কবুতরের প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও ডিম ফুটানো)pigeon egg development

কবুতরের প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও ডিম ফুটানো




হাঁস-মুরগির মতো যে কোনো মর্দা কবুতর মাদী কবুতরের সাথে হজে জোড়া বাঁধে না। এদেরকে এক সাথে এক সপ্তাহ রাখলে জোড়া বাঁধে। মুরগীর ন্যায় কবুতরের জননতন্ত্রে ডিম উৎপন্ন হয়। তবে ডিম্বাশয়ে একসাথে সাধারণত মাত্র দু’টি ফলিকুল তৈরি হয়।
এ কারণে প্রতিটি মাদী কবুতর দু’টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ৪০-৪৪ ঘন্টা পূর্বে ডিম্ব স্খলন হয় এবং ডিম পাড়ার কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা পূর্বে তা নিষিক্ত হয়। অর্থাৎ যে ১৬-২০ ঘন্টা পর্যন্ত ডিম ডিম্বনালীতে থাকে সে সময়ে তা নিষিক্ত হয়ে থাকে।


ডিম পাড়ার পর থেকে মর্দা ও মাদী উভয় কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দিতে শুরু করে। মাদী কবুতর প্রায় বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডিমে তা দেয় এবং বাকী সময়টুকু অর্থাৎ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মর্দা কবুতর তা দিয়ে থাকে। তা দেয়ার পঞ্চম দিনেই ডিম পরীক্ষা করে উর্বর বা অনুর্বর ডিম চেনা যায়। বাতির সামনে ধরলে উর্বর ডিমের ভিতর রক্তনালী দেখা যায়। কিন্তু অনুর্বর ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের ভিতর স্বচ্ছ দেখাবে। সাধারণত ডিম পাড়ার ১৭-১৮ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এভাবে একটি মাদী কবুতর সাধারণত ১২ মাসে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে। জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৬ দিন বয়স পর্যন্ত কবুতরের বাচ্চার ক্রমবর্ধমান অবস্থা থাকে। প্রথমে সারা দেহ হলুদ পাতলা বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকে।


এই সময় নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়। প্রায় ৪-৫ দিন পর বাচ্চার চোখ খোলে বা ফুটে। পনের দিনে সমস্ত শরীর পালকে ছেয়ে যায়। প্রায় ১৯-২০ দিনে দু’টো ডানা এবং লেজ পূর্ণতা লাভ করে ও ঠোঁট স্বাভাবিক হয়। এই ভাবে ২৬-২৮ দিনে কবুতরের বাচ্চা পূর্ণতা লাভ করে। কবুতর সাধারণত ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

Fancy Pigeon in Bangladesh (বাংলাদেশের ফেন্সি কবুতর)




Fancy Pigeon in Bangladesh

বাংলাদেশের ফেন্সি কবুতর

Fancy pigeon:

ফেন্সি কবুতর হল বিদেশি কবুতর। আমাদের দেশে অনেক  প্রজাতির কবুতর পাওয়া যায়। যেমনঃ

Bangladeshi Pigeon : 
  1. ঘোলা  কবুতর (Ghola Kobutor)।
  2. গিরিবাজ কবুতর।(Giribaj Kobutor).
  3. জালালি কবুতর। (Jalali Kobutor).
  4.     
    1. Ghola Kobutor


    3. Jalali Kobutor
    2. Giribaj Kobutor







    Fancy Pigeon: 

    Pigmy Pouter


    Pigmy Pouter



    Crested Helmet
    Crested Helmet



    German Beauty Homer
    German Beauty Homer



    red Carneau
    Red Carneau
    Danish Suabian
    Danish Suabian

    Fantail pigeon
    Fantail pigeon

    এছাড়াও আরো অনেক প্রজাতির কবুতর আমাদের দেশে পাওয়া যায় এবং তা পালন করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।

    জাত বা ধরন গুলো কোন নির্দিষ্ট কিছু নয়। বিভিন্ন রং, বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, চোখ ইত্যাদি এর উপর ভিত্তি করে নামকরণ বা জাত ঠিক করা হয়। এছাড়া ক্রস ব্রিডিং -এর মাধ্যমেও নতুন জাত তৈরি হয়ে থাকে। সচরাচর লভ্য জাতগুলো হলোঃ
    • হোমার (উড়াল প্রতিযোগিতায় ব্যবহার হয়)- হোমিং পিজিয়ন থেকে
    • গোলা (দেশী কবুতর)
    • লাক্ষা (সৌখিন) - ভারত থেকে এসেছে
    • সিরাজী (সৌখিন ) - লাহোর নামে পাওয়া যায়
    • গিরিবাজ - (উড়ানোর জন্য বিখ্যাত)
    • কাগজি (সমস্ত শরীর সাদা কিন্তু সমস্ত চোখ কালো)
    • চিলা
    • গোররা (শরীর সাদা কালো মিশ্রণ, যেমন মাথা সাদা, পিঠ কালো, ডানা সাদা)
    • চুইনা (সমস্ত শরীর সাদা কিন্তু সমস্ত চোখ কালো নয়)
    • রান্ট
    • প্রিন্স
    • পটার
    • ফ্রিল ব্যাক
    • জ্যাকোবিন
    • স্ট্রেসার
    • মডেনা
    • মুসল দম (সমস্ত শরীর কালো কিন্তু দম বা লেজ গুলো সাদা)
    • নোটন (মাটিতে ডিগবাজি দেয়)
    • কিং


    আমরা এর প্রতিটির ডিটেইস আলোচনা করবো। 

      (কবুতরের গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ) Pigeon Diseases Treatment

      কবুতরের গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:

      কবুতরের অনেক রোগ বালাই রয়েছে। আমরা তা নিম্নে ছক আঁকারে দেখালামঃ



      Key Of This Article:

      1. বিভিন্ন রোগ 
        1. সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস
        2. করাইজা অথবা আউল’স হেড
        3. মাইকোপ্লাজমোসিস
        4. ক্ল্যামাইডিওসিস অথবা অরনিথোসিস
        5. নিউক্যাসল অথবা প্যারামিক্সো ভাইরাস-১
        6. ডিফথেরো স্মল পক্স (বসন্ত রোগ)
        7. পরজীবী রোগ
      2. এমাইনো এসিড
      3. অপুষ্টিজনিত ও বিপাকীয় রোগসমূহ
        1. ভিটামিন এ এর ঘাটতি
        2. ভিটামিন ডি এর ঘাটতি
        3. ভিটামিন ই
        4. ভিটামিন কে
        5. ভিটামিন বি১
        6. ভিটামিন বি৬
        7. ভিটামিন বি২
        8. ফলিক এসিড
        9. ম্যানটোথেনিক এসিড
        10. বায়োটিন


      বিভিন্ন রোগ ও লক্ষন সাথে তার প্রতীকার সহ চিকিৎসাঃ

      রোগের নাম কারণ লক্ষণ চিকিৎসা প্রতিরোধ
      সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো, ফেনা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়। দেহ ক্রমাগত শুকিয়ে যায়। ভারসাম্য হীনতা ও পক্ষাঘাত পরিলক্ষিত হয়। এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে। ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
      ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
      পাসটিউরেলা মালটোসিডা ডাইরিয়া, জ্বর (৮২-৮৩০ ঈ) কোন লক্ষণ ব্যতীত ২৪-৪৮ ঘন্টা মধ্যে কবুতর মারা যায় এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে। ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
      করাইজা অথবা আউল’স হেড হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা সর্দি, চোখের পাতাদ্বয় ফুলে প্যাঁচার মাথার ন্যায় দেখায়, অক্ষিঝিলি্ল প্রদাহের ফলে চোখ দিয়ে (muco-purulent) পদার্থ নির্গত হয়। এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে। ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
      মাইকোপ্লাজমোসিস মাইকোপ্লাজমা কলাম্বিনাম সর্দি, চোখ ও নাক দিয়ে প্রথমে পানি এবং পরে muco-purulent পদার্থ নির্গত হয়। মুখ ও কন্ঠ অত্যধিক প্রদাহে স্ফীত থাকে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। টিয়ামুলিন, টাইলোসিন এনরোফ্লুক্সসিন, স্পাইরামাইসিন, লিনকোমাইসিন গ্রুপের ঔষধ ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
      ক্ল্যামাইডিওসিস অথবা অরনিথোসিস ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে, স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং রোগ ভোগের পর মরা যায় ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন, টাইলোসিন, লিনকোমাইসিন, স্পাইরামাইসিন ইত্যাদি ১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      ২। টিকা প্রদান করতে হবে।
      নিউক্যাসল অথবা প্যারামিক্সো ভাইরাস-১ প্যারামিক্সো ভাইরাস টাইপ-১ সবুজ রংয়ের ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মুখ হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা, পাখা ও পায়ের পক্ষাঘাত ইত্যাদি। এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন, ইমিউনো স্টিমুলেটর * জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      * টিকা প্রদান করতে হবে।
      ডিফথেরো স্মল পক্স (বসন্ত রোগ) বোরেলিয়া কলাম্বরী ভাইরাস পালকহীন ত্বক বিশেষ করে চোখ, ঠোঁটের চারপাশে এবং পায়ে ক্ষত বা পক্স দেখা যায় এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন এ এবং সি, ইমিউনো স্টিমুলেটর, টপিক্যাল আইওডিন * জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
      পরজীবী রোগ আইমেরিয়া, এসকারিস, ক্যাপিলারিয়া, ট্রাইকোমোনা দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, শুকিয়ে যাওয়া, ডাইরিয়া (মলে রক্ত থাকে ককসিডিয়া), পুষ্টিহীনতা ও অবশেষে মৃত্যু ঘটে। কৃমিনাশক, ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স, এমাইনো এসিড * জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।

      অপুষ্টিজনিত ও বিপাকীয় রোগসমূহ



      ভিটামিন এ এর ঘাটতি দেহে ক্ষত হয়, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় এবং অক্ষিঝিলি্লর প্রদাহ দেখা দেয়, ক্ষুধা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধি ও পালকের গঠণ ব্যাহত হয়, উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায় ২০০ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন নিয়মিত ভিটামিন, প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান অথবা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে।
      ভিটামিন ডি এর ঘাটতি অস্থি নরম ও বাঁকা হয়ে যায়, ডিম উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়, ডিমের খোলস পাতলা হয়। ৪৫ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন ভিটামিন ডি ও মিনারেল প্রিমিক্স প্রদান, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (কডলিভার অয়েল, ফিস মিল) প্রদান করতে হবে।
      ভিটামিন ই এনসেফালোম্যালাশিয়া রোগ হয়, পক্ষাঘাতের ফলে চলতে অসঙ্গতি দেখা দেয়। বুক ও পেটের নীচে তরল পদার্থ জমে, ইডিমা হয়। ডিমের উর্বরতা কমে যায়। ১ মিগ্রা সেলিনিয়াম সহ ভিটামিন ই প্রদান করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার (শস্য দানা, গম, চাউলে কুড়া, শুটকি মাছ) খাওয়াতে হবে।
      ভিটামিন কে রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। —— ভিটামিন কে প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (সবুজ শাকসবজি ও মাছের গুঁড়া)।
      ভিটামিন বি১ পা, ডানা ও ঘাড়ে পক্ষাঘাত হয়। ঘাড়ের পক্ষাঘাতের ফলে ঘাড় পেছন দিকে করে আকাশের দিকে মুখ করে থাকে, চলনে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। ০.১ মিগ্রা ভিটামিন বি১ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান (চাউলের কুড়া, গমের গুঁড়া, শাক সবজি)
      ভিটামিন বি২ ছানার পা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। পরে নখ বা আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। ছানার দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ০.১২ মিগ্র ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (সবুজ শাক সবজি, ছোলা, খৈল, আলফা-আলফা, ঈষ্ট)
      ভিটামিন বি৬ ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। ছানার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্যারালাইসিস ও পেরোসিস হতে পারে। ০.১২ মিগ্রা ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (শস্য, মাছের গুঁড়া, আলফা-আলফা, ঈষ্ট ইত্যাদি)
      ভিটামিন বি১২ বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ডিমের উর্বরতা হ্রাস পায়। ০.২৪ মিগ্রা ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, মাংস ফিসমিল ইত্যাদি)
      ফলিক এসিড রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও পালক কম গজায়। ০.০১৪ মিগ্রা ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও সাথে ম্যানগানিজ (সহ) প্রদান করতে হবে। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, ঈষ্ট)
      ম্যানটোথেনিক এসিড বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও চর্ম রোগ হয়। পা ও চোখের চারিপাশে নেক্রোসিস হয়। ডিমের উর্বরতা হ্রাস। ০.৩৬ মিগ্রা প্যানটোথেনিক এসিড সমৃদ্ধ ভিটামিন প্রদান (চীনাবাদাম, আখের গুড়, ঈষ্ট, চাউলের কুড়া, গমের ভূষি ইত্যাদি)
      বায়োটিন পেরোসিস, ডিমের উর্বরতা হ্রাস ও চর্ম প্রদাহ দেখা দেয়। ০.০০২ মিগ্রা বায়োটিন সমৃদ্ধ ভিটামিন ও খাদ্য প্রদান।
      খনিজ পদার্থ (সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন, ম্যানগানিজ, কপার এন্ড কোবাল্ট, আয়রন হাড় গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ডিমের খোসা নরম হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পেরোসিস ও প্যারালাইসিস হয়। —– পাখিকে নিয়মিত ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও খাদ্য প্রদান করতে হবে।



      এমাইনো এসিড

      আমিষ বিভিন্ন প্রকার এমাইনো এসিড সরবরাহ করে যা দেহ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক। যে সব এমাইনো এসিড পাখির দেহে সংশ্লেষণ হয় না তাকে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বলে। সুতরাং পাখিকে এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য (শুটকি মাছের গুড়া, সরিষা, তিল ও চীনাবাদামের খৈল) সরবরাহ করতে হবে।


      অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের নাম
      মথিওনিন
      লাইসিন
      ভ্যালিন
      লউসি
      আইসো-লিউসিন
      ফিনাইল অ্যালানিন
      ট্রিপটোফেন
      আরজিন
      হিসটিডিন
      ফ্রিওনিন
      প্রতিদিনের প্রয়োজন
      ০.০৯ গ্রাম
      ০.১৮ গ্রাম
      ০.০৬ গ্রাম
      ০.০৯ গ্রাম
      ০.০৫৫ গ্রাম
      ০.০৯ গ্রাম
      ০.০২ গ্রাম



      উপসংহার
      কবুতরের সাধারণত মুরগির থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এক জোড়া কবুতরের গড় উৎপাদন ক্ষমতা ৫-১২ বছর অথচ সেখানে মুরগির মাত্রা ১-১২ বছর হয়ে থাকে।
      এ সমস্ত দিক বিবেচনা করে এটা সহজেই বলা যায় যে কবুতর পালন একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। মুরগির ন্যায় যদি কবুতরকে পারিবারিকভিত্তিতে ব্যাপকভাবে পালন করা যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অনেক বেশি সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা যায়। অবশ্য এই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া বিশেষ প্রয়োজন।

      Saturday, January 20, 2018

      Bangladeshi Pigeon (বাংলাদেশি কবুতর)

      Pigeon of Bangladesh

      আমাদের বাংলাদেশে পাওয়া যায় প্রধানত ৩ ধরনের কবুতরঃ

      ১। ঘোলা কবুতর।

      ঘোলা কবুতর।
      ঘোলা কবুতর।


      আমাদের দেশের গ্রাম বা শহরে বেশির ভাগ মানুষ এই প্রজাতির কবুতর পালন করে থাকেন। কারন এই প্রজাতির কবুতর আমাদের দেশে জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে।

      কেন আমরা ঘোলা পালন করবো??


      • ঘোলা কবুতর আমাদের দেশি কবুতর।
      • তুলনা মূলক ভাবে এর দাম অনেক কম।
      • এরা আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ুর সাথে তাল মিলিতে সক্ষম।
      • এদের রোগ বালাই কম হয়।
      • এরা অন্যান্য কবুতর থেকে দ্রুত সময় বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম। 
      • ঘোলা কবুতরের শরিরে গোস্তের পরিমান বেশি।

      ২। গিরিবাজ কবুতরঃ 

      গিরিবাজ কবুতর
      গিরিবাজ কবুতর



      গিরিবাজ আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় কবুতর। এই কবুতর গুলো দেখতে সুন্দর হয় আর এদের আকাশে উড়ার সক্ষমতা অনেক বেশি। অনেক বেশি সময় ধরে গিরিবাজ আকাশে উরতে পারে। 


      গিরিবাজ পালনের লাভ সমুহঃ


      • গিরিবাজ এদেশের কবুতর তাই দেশি কবুতর বলে ফেন্সি কবুতিরের থেকে দাম কম।
      • বাসা চিনার ক্ষমতা বেশি।
      • সর্বচ্চ্য ৮ ঘণ্টা উড়তে পারে।
      • ফেন্সি কবুতরের তুলনায় এদের ডিম নষ্ট কম হয়।
      • তাই এদের বাচ্চাও বেশি হয়।
      • ঘোলার তুলনায় এরা কম গোস্তের অধিকারি।
      • এরা যে কোন খাবারে অভ্যস্ত।

      ৩। জালালি কবুতরঃ




      জালালি কবুতর সাধারত বন্য কবুতর। এই প্রজাতির কবুতর খামার অথবা বাসায় পালা হয় না। অনেকের মুখে শুনা যায় যে এই কবুতর নাকি হজরত শাহ জালাল (রঃ) তার জীবৎকালে পালন করতেন। এই প্রকারের কবুতরের প্রতি মানুষের ভিন্ন ধরনের আবেগ ও সম্মান কাজ করে।

      Saturday, January 19, 2013

      বাণিজ্যিকভাবে উটপাখি পালন (ostrich petting in bangladesh)

      বাণিজ্যিকভিত্তিতে হাঁস, মুরগি, কোয়েল, কবুতর ও বিভিনড়ব বাহারী পাখি প্রতিপালন আমাদের দেশে মোটামুটি একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প হিসাবে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি লাভ করেছে; কিন্তু উটপাখি পালনও যে ব্যবসায়িক দিক থেকে অনুরূপ একটি শিল্প হিসাবে পরিগণিত হতে পারে সে বিষয়টি অদ্যাবধি সম্ভবত বিবেচনায় আনা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর বহু দেশে উটপাখির খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। উটপাখির পালক অত্যন্ত মূল্যবান যা মূলত সাজসজ্জার কাজে ব্যবহৃত হয়। এদের চামড়াও খুব মূল্যবান এবং এদের মাংস আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

      ইংরেজি পরিভাষায় উটপাখিকে Octrich বলা হয় এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Struthio camelis । পক্ষীকুলের মধ্যে উটপাখি হচ্ছে সর্ববৃহৎ এবং এদের ডিমও আকারে সর্বাপেক্ষা বড়ো হয়ে থাকে। একটি বয়স্ক উটপাখির ওজন ৬৩-১৩০ কেজি (১৪০-২৯০ পাউন্ড) হয়ে থাকে তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি পুরুষ উটপাখির ওজন ১৫৫ কেজি (৩৪০ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে। পরিণত বয়স্ক পুরুষ উটপাখির দেহের পালক সাধারণত কালো বর্ণের হয় এবং প্রাথমিক ও লেজের পালক সাদা বর্ণের হয়। স্ত্রী জাতীয় ও কম বয়সী পুরুষ উটপাখির দেহের পালক ধূসর-বাদামী ও সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয় জাতীয় উটপাখির গলা প্রায় পালকশূন্য থাকে।

      দীর্ঘ গলা ও পা এদের মাথাকে ভূমি থেকে প্রায় ১.৮-২.৭৫ মিটার উচ্চে রাখে এবং এদের চক্ষু ভূমিতে বিচরণশীল সকল মেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে সর্বপেক্ষা বৃহৎ বলে জানা যায়। এই বৃহৎ চক্ষুর জন্য এরা এদের শত্র“কে বহু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এদের পা খুব শক্তিশালী হয় এবং অন্যান্য পাখিদের ন্যায় তা পালকশূন্য ও আঁশযুক্ত হয়ে থাকে। এদের পায়ে মাত্র দুইটি আঙ্গুল থাকে (অধিকাংশ পাখির থাকে চারটি) যার মধ্যে বড়োটি নখরযুক্ত এবং বাইরের দিকেরটি নখরশূন্য হয়। উভয় পাখা বিস্তার করলে তা প্রায় দুই মিটার (ছয় ফুটের অধিক) বিস্তৃত হয়। এই পাখা দ্বারা এরা বাচ্চাদেরকে ছায়া দান করে। উটপাখির ঠোঁট চেপ্টা ও চওড়া এবং মাথা একটু বাঁকানো। এদের খাদ্যথলি ও পিত্তথলি নেই। অন্যান্য পাখিদের ন্যায় বিষ্ঠার সাথে মূত্র নিষ্ক্রান্ত হয় না বরং এরা পৃথকভাবে মূত্র নিষ্কাষণ করে থাকে।

      উটপাখি যৌন পরিপক্কতা লাভ করে ২-৪ বছর বয়সে। এ সময় পুরুষ পাখির উচ্চতা হয় ১.৮-২.৮ মিটার (৫.৯-৯.২ ফুট) এবং স্ত্রী উটপাখির উচ্চতা হয় ১.৭-২.০ মিটার (৫.৬-৬.৬ ফুট) । প্রথম দুই বছরে বাচ্চার বৃদ্ধি ঘটে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ সেমি (৯.৮ ইঞ্চি) করে এবং এক বছর বয়সে একটির ওজন প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম (৯৯ পাউন্ড) হয়।

      উটপাখির প্রাপ্তিস্থান আগে আফ্রিকার উত্তর, সাহারা অঞ্চলের দক্ষিণ, পূর্ব আফ্রিকা, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বনভূমি এবং এশিয়া মাইনরে উটপাখির আবাসভূমি ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে এরা আফ্রিকার উন্মুক্ত অঞ্চলের তৃণভূমিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার আধা-মরুভূমি অথবা মরুভূমি এলাকায় বিচরণ শুরু করে।

      উটপাখির আচরণ উটপাখি শীতকালে সাধারণত জোড়াবদ্ধ বা একাকী থাকে। প্রজনন ঋতু বা অত্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এরা ৫ থেকে ৫০টি একত্রে বিচরণ করে যার মধ্যে একটি স্ত্রী উটপাখি রাণীর পদমর্যাদায় থাকে। এরা সাধারণত জেব্রা বা হরিণের সাথে বিচরণ করে। দিবাভাগে এরা চারণভূমিতে থাকে তবে জ্যোৎনালোকিত রাতেও এরা প্রায়শ ঘোরাঘুরি করে থাকে। এদের রয়েছে প্রখর দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি যার দ্বারা এরা সিংহ বা অন্য হিংস্র প্রাণীর আগমন বহু দূর থেকেই টের পায়। হিংস্র প্রাণী কর্তৃক ধাবিত হলে এরা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘন্টায় ৭০ কিমি বা প্রায় ৪৪ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। পৃথিবীতে দুই পা বিশিষ্ট প্রাণীদের মধ্যে এরাই সর্বাপেক্ষা বেশি দ্রুতগ্রামী।

      দৌড়ানোর সময় এদের দুই পাখাকে “রাডার” হিসাবে ব্যবহার করে বলে এরা দ্রুত এদের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এ সময় লম্বা এক পদক্ষেপে এরা ১০-১৫ ফিট (৩-৫ মিটার) দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। ভূমিতে বিচরণশীল প্রাণীদের মধ্যে উটপাখি হচ্ছে দ্বিতীয় দ্রুতগ্রামী প্রাণী। আক্রান্ত হলে এরা মাটিতে শুয়ে মাথা ও গলা এমনভাবে বিছিয়ে দেয় যে তখন দূর থেকে তা মাটির টিবির মতো মনে হয়। শত্রু থেকে রক্ষা পাবার জন্য এরা এদের পা ব্যবহার করে। পায়ের লাথিতে শত্রু আহত হয় এবং অনেক সময় তাদের মৃত্যুও ঘটতে পারে।

      খাদ্য ব্যবস্থা উটপাখি প্রধানত তৃণলতা, ঘাস, দানাদার খাদ্য, ফল ও ফুল ভক্ষণ করে। অবশ্য এরা মাঝে-মধ্যে পোকা-মাকড়ও ভক্ষণ করে থাকে।
      বাণিজ্যিকভাবে উটপাখি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পিলেটেড পোল্ট্রি খাদ্য খাওয়ানো হয়। দৈহিক বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খাদ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নিুরূপঃ
      ২০-২৪% ক্রুড প্রোটিন
      ১২-১৯% ক্রুড ফাইবার
      ১.২-২% ক্যালসিয়াম
      ০.৬-১.১% ফসফরাস
      ১০,০০০-১৫,০০০ আই ইউ/ কেজি ভিটামিন এ
      ১,৫০০-২,৫০০ আই ইউ/কেজি ভিটামিন ডি (ড্রাই ম্যাটারের ভিত্তিতে)
      প্রজননের জন্য উটপাখির খাদ্যের ফর্মূলা একই তবে এই সাথে ক্যালসিয়াম ২.৮% হারে প্রদান করতে হয়।
      পিলেটেড ফিডের সাথে সবুজ কচি শাক-সবজি সরবরাহ করতে হবে। এছাড়াও এদের খাদ্যের সাথে অতিরিক্ত ট্রেস ইলিমেন্টস্ সংযোজন করতে হয়।

      উটপাখির মাংসের বৈশিষ্ট্য ১. এদের মাংসে ৩% এরও কম ফ্যাট থাকে।
      ২. মাংস সংগৃহীত হয় সাধারণত ঊরু, পা এবং পিঠ থেকে।
      ৩. ভূমিতে বিচরণশীল অন্যান্য প্রাণীদের থেকে এদের খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা অনেক উচ্চ মানের।
      ৪. এদের মাংসে যে ফ্যাট থাকে তা আনস্যাচুরেটেউ ফ্যাটি এসিড।

      অন্যান্য প্রাণীর মাংসের তুলনায় উটপাখির মাংসে চর্বির পরিমাণ কম থাকায় তা দ্রুত রানড়বা করা যায়। এদের মাংসে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কম থাকাতে পুষ্টিবিদগণ উটপাখির মাংস গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
      মুরগির ন্যায় এরাও খাদ্য হজমের জন্য পাথরের টুকরা ভক্ষণ করে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক উটপাখির পাকস্থলীতে প্রায় ১ কেজি পাথর থাকে। এগুলো গিজার্ডে খাদ্য ভাঙ্গার জন্য ব্যবহৃত হয়। উটপাখি পানি ব্যতীত কয়েকদিন থাকতে পারে। এরা যে সমস্ত তৃণলতা গ্রহণ করে সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু পানি পেলে এরা পানি পান করে এবং ঘনঘন পানিতে স্নান করে।
      উটপাখি তাপমাত্রার বিরাট ব্যবধান সহজেই সহ্য করতে পারে। এমনকি দিবা-রাত্রির ৪০০সে তাপের হেরফেরও এরা সহ্য করে থাকে। এরা এদের বিরাট পাখা দ্বারা পালকবিহীন দুই পাকে আবরিত করে রাখে যা তাপকে ধারণ করতে সহায়তা করে।

      প্রজনন উটপাখি সাধারণত ২-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। স্ত্রী উটপাখি পুরুষের থেকে ৬ মাস আগেই প্রজননক্ষমতা প্রাপ্ত হয়। প্রজনন ঋতু শুরু হয় মার্চ অথবা এপ্রিলের পূর্বভাগে এবং তা সেপ্টেম্বরের আগেই শেষ হয়। অবশ্য এই প্রজনন প্রক্রিয়া ভূ-অঞ্চলভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। একটি এলাকার প্রধান পুরুষ উটপাখি ২ থেকে ৭টি স্ত্রী উটপাখির সমন্বয়ে গঠিত “হারেমের” কর্তৃত্ব গ্রহণের জন্য মুখ থেকে একজাতীয় ফোঁস ফোঁস শব্দ করতে থাকে। বিজয়ী প্রধান উটপাখি প্রতিটি স্ত্রী উটপাখির সাথে মিলিত হয় তবে এদের মধ্যে প্রভাবশালী একটি পুরুষ পাখি প্রধান একটি স্ত্রী উটপাখির সঙ্গে জোড়া বাঁধে।
      পুরুষ উটপাখি ঘনঘন পাখা আন্দোলিত করে তার সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করে। এরপর তারা আড়ালে চলে যায় ও অনাহুত সকলকে বিতাড়িত করে।
      সকল স্ত্রী উটপাখি একটি ৩০-৬০ সেমি (১২-২৪ ইঞ্চি) গভীর ও ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) প্রশস্ত সাধারণ গর্তের মধ্যে ডিম পাড়ে। পুরুষ পাখিই কর্তৃক এই গর্ত খোদিত হয়। হারেমের প্রধান উটপাখি সর্বপ্রথমে ডিম পাড়ে। এরপর ডিমে তা দেয়ার সময় সে অন্যান্যদের ডিমগুলো ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট ২০টি ডিমে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) তা দেয়া শুরু করে। একটি ডিম গড়ে ১৫ সেমি (৫.৯ ইঞ্চি) লম্বা, ১৩ সেমি (৫.১ ইঞ্চি) প্রস্থ এবং ১.৪ কেজি (৩.১ পাউন্ড) ওজনের হয়ে থাকে। ডিমের খোসা পুরু ও চকচকে ক্রিম বর্ণের হয়ে থাকে। ডিমের উপরিভাগে গর্তের ন্যায় ছোট ছোট দাগ থাকে। উটপাখির ডিম সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হলেও তা অন্যান্য পাখির দৈহিক ওজনের অনুপাতে তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট। স্ত্রী উটপাখি দিনে এবং পুরুষ পাখি রাত্রে পর্যায় ক্রমে ডিমে তা দেয়। দিনের বেলা উটপাখির বাসা যেন চিহ্নিত না করা যায় সে জন্য স্ত্রী উটপাখি বালু দ্বারা নিজেকে বে−ন্ড করে এবং কৃষ্ণ বর্ণের পুরুষ পাখিকে রাতের অন্ধকারে প্রায়শ সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এভাবেই এরা শত্রু থেকে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখে। সাধারণত ৩৫-৪৫ দিন পর্যন্ত ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা ফুটে। পুরুষ পাখি বাচ্চাদেরকে খাদ্য খাওয়ানো শেখায় এবং এদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ করে। বাচ্চাদের বেঁচে থাকার হার খুব কম হয়। এদের শত্র“ হচ্ছে, হায়েনা, শিয়াল, শকুন ইত্যাদি।

      খামারে বাচ্চা প্রতিপালন ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাদেরকে ঘরের মধ্যে প্রতিপালন করা প্রয়োজন। সদ্য ভূমিষ্ঠ বাচ্চাদেরকে ২৮-৩০০ সে তাপমাত্রায় রাখতে হয় এবং প্রথম সপ্তাহে দিনে ৩-৪ বার খাদ্য পরিবেশন করতে হয়। পরবর্তী ৩ সপ্তাহ রাত্রে ন্যূনপক্ষে ৩০০সে তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। বাচ্চা প্রতিপালন কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।
      বাচ্চাদেরকে খাদ্যের সাথে ইসেনসিয়াল এমাইনো এসিড, প্রোটিন, এনার্জি ও ট্রেস ইলিমেন্টস্ সরবরাহ করতে হয়।

      উটপাখির বাণিজ্যিক মূল্য ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে মেসোপোটেমিয়া ও মিশরে উটপাখির বহুল ব্যবহার প্রচলিত ছিল। রোমানরা উটপাখিকে খেলাধুলা ও মাংসের জন্য ব্যবহার করতো। এদের পালক দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান পরিচ্ছদ প্রস্তুত করা হতো এবং চামড়া নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। এসব কারণে অতিরিক্ত শিকারের ফলে অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে এদের সংখ্যা দারুণভাবে হ্রাস পেতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পালকের ব্যবসাতে ভাটা পড়ে। এর পর পরবর্তী পর্যায়ে চামড়া ও পালকের জন্য বাণিজ্যিকভিত্তিতে উটপাখি পালন শুরু হয় এবং ১৯৭০ এর পর থেকে তা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। উটপাখির চামড়া খুব শক্ত বলে পরিচিতি। এদের মাংস স্বাদে চর্বিহীন গরুর মাংসের অনুরূপ। এতে চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুব কম এবং ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রণ উচ্চ মাত্রায় থাকে। কাঁচা মাংসের রং গাঢ় লাল বা লাল চেরী ফলের ন্যায় হয়ে থাকে যা গরুর মাংসের চেয়ে গাঢ় বর্ণের হয়।

      কোনো কোনো দেশে মানুষ উটপাখির উপর চড়ে দৌড় প্রতিযোগিতার অংশ গ্রহণ করে। বিশেষ করে আফ্রিকাতে এ ধরনের ক্রীড়া মোটামুটি জনপ্রিয়। ঘোড়ার পিঠে মানুষ যেভাবে চড়ে অনেকটা অনুরূপভাবেই উটপাখিও চালিত হয় । উটপাখিকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটা কঠিন এবং এরা ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগ্রামী। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলিতে পর্যটকদের আকর্ষণ ও বিনোদনের জন্য “দি অস্ট্রিচ ফার্ম” উদ্বোধন করা হয়েছে যেখানে এ ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মিনিসোটা, আইওয়া ও কেন্টাকির বিভিনড়ব পার্কে উটপাখির দৌড়ের প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যেও এটা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

      প্রাকৃতিকভাবে বিচরণশীল উটপাখির সংখ্যা বিগত ২০০ বছরে মারাত্নক হারে হ্রাস পেয়েছে তবে পৃথিবীর বিভিন্ন বড় দেশের খামার ও পার্কে যত্নের সাথে এদেরকে প্রতিপালন করা হচ্ছে।

      উটপাখির মাংস, চামড়া ও পালক যেহেতু অত্যন্ত মূল্যবান এবং বিদেশে এ সবের কদর ও চাহিদা অত্যধিক সেহেতু বাণিজ্যিকভিত্তিতে তা পালন অত্যন্ত লাভজনক হবে। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে পোল্ট্রি, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি প্রতিপালন অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই সাথে উটপাখি পালনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হলে এই খাত থেকেও প্রভূত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। উটপাখি অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণ এবং এদের জন্য খাদ্য খরচ বাবদ ব্যয়ও খুব বেশি নয়। এদের রোগ-ব্যাধিও খুব কম হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় এই পাখিকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে প্রতিপালনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
      লেখক: ডাঃ এ এফ এম রফিকুল হাসান
      তথ্যসূত্র: পোলট্রি, পশুসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘খামার’
      samilinfo.blogspot.com

      কবুতর পালন ও আধুনিক কৃষি

      কবুতর পালন ও  আধুনিক কৃষি  kobutor palon কৃষি নয়, আধুনিক কৃষি এই ব্রত নিয়ে আমাদের যাত্রা। আর কৃষি বিপ্লের জন্য চাই পর্যাপ্ত ...