Saturday, January 19, 2013

বাণিজ্যিকভাবে উটপাখি পালন (ostrich petting in bangladesh)

বাণিজ্যিকভিত্তিতে হাঁস, মুরগি, কোয়েল, কবুতর ও বিভিনড়ব বাহারী পাখি প্রতিপালন আমাদের দেশে মোটামুটি একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প হিসাবে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি লাভ করেছে; কিন্তু উটপাখি পালনও যে ব্যবসায়িক দিক থেকে অনুরূপ একটি শিল্প হিসাবে পরিগণিত হতে পারে সে বিষয়টি অদ্যাবধি সম্ভবত বিবেচনায় আনা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর বহু দেশে উটপাখির খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। উটপাখির পালক অত্যন্ত মূল্যবান যা মূলত সাজসজ্জার কাজে ব্যবহৃত হয়। এদের চামড়াও খুব মূল্যবান এবং এদের মাংস আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

ইংরেজি পরিভাষায় উটপাখিকে Octrich বলা হয় এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Struthio camelis । পক্ষীকুলের মধ্যে উটপাখি হচ্ছে সর্ববৃহৎ এবং এদের ডিমও আকারে সর্বাপেক্ষা বড়ো হয়ে থাকে। একটি বয়স্ক উটপাখির ওজন ৬৩-১৩০ কেজি (১৪০-২৯০ পাউন্ড) হয়ে থাকে তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি পুরুষ উটপাখির ওজন ১৫৫ কেজি (৩৪০ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে। পরিণত বয়স্ক পুরুষ উটপাখির দেহের পালক সাধারণত কালো বর্ণের হয় এবং প্রাথমিক ও লেজের পালক সাদা বর্ণের হয়। স্ত্রী জাতীয় ও কম বয়সী পুরুষ উটপাখির দেহের পালক ধূসর-বাদামী ও সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয় জাতীয় উটপাখির গলা প্রায় পালকশূন্য থাকে।

দীর্ঘ গলা ও পা এদের মাথাকে ভূমি থেকে প্রায় ১.৮-২.৭৫ মিটার উচ্চে রাখে এবং এদের চক্ষু ভূমিতে বিচরণশীল সকল মেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে সর্বপেক্ষা বৃহৎ বলে জানা যায়। এই বৃহৎ চক্ষুর জন্য এরা এদের শত্র“কে বহু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এদের পা খুব শক্তিশালী হয় এবং অন্যান্য পাখিদের ন্যায় তা পালকশূন্য ও আঁশযুক্ত হয়ে থাকে। এদের পায়ে মাত্র দুইটি আঙ্গুল থাকে (অধিকাংশ পাখির থাকে চারটি) যার মধ্যে বড়োটি নখরযুক্ত এবং বাইরের দিকেরটি নখরশূন্য হয়। উভয় পাখা বিস্তার করলে তা প্রায় দুই মিটার (ছয় ফুটের অধিক) বিস্তৃত হয়। এই পাখা দ্বারা এরা বাচ্চাদেরকে ছায়া দান করে। উটপাখির ঠোঁট চেপ্টা ও চওড়া এবং মাথা একটু বাঁকানো। এদের খাদ্যথলি ও পিত্তথলি নেই। অন্যান্য পাখিদের ন্যায় বিষ্ঠার সাথে মূত্র নিষ্ক্রান্ত হয় না বরং এরা পৃথকভাবে মূত্র নিষ্কাষণ করে থাকে।

উটপাখি যৌন পরিপক্কতা লাভ করে ২-৪ বছর বয়সে। এ সময় পুরুষ পাখির উচ্চতা হয় ১.৮-২.৮ মিটার (৫.৯-৯.২ ফুট) এবং স্ত্রী উটপাখির উচ্চতা হয় ১.৭-২.০ মিটার (৫.৬-৬.৬ ফুট) । প্রথম দুই বছরে বাচ্চার বৃদ্ধি ঘটে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ সেমি (৯.৮ ইঞ্চি) করে এবং এক বছর বয়সে একটির ওজন প্রায় ৪৫ কিলোগ্রাম (৯৯ পাউন্ড) হয়।

উটপাখির প্রাপ্তিস্থান আগে আফ্রিকার উত্তর, সাহারা অঞ্চলের দক্ষিণ, পূর্ব আফ্রিকা, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বনভূমি এবং এশিয়া মাইনরে উটপাখির আবাসভূমি ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে এরা আফ্রিকার উন্মুক্ত অঞ্চলের তৃণভূমিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার আধা-মরুভূমি অথবা মরুভূমি এলাকায় বিচরণ শুরু করে।

উটপাখির আচরণ উটপাখি শীতকালে সাধারণত জোড়াবদ্ধ বা একাকী থাকে। প্রজনন ঋতু বা অত্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এরা ৫ থেকে ৫০টি একত্রে বিচরণ করে যার মধ্যে একটি স্ত্রী উটপাখি রাণীর পদমর্যাদায় থাকে। এরা সাধারণত জেব্রা বা হরিণের সাথে বিচরণ করে। দিবাভাগে এরা চারণভূমিতে থাকে তবে জ্যোৎনালোকিত রাতেও এরা প্রায়শ ঘোরাঘুরি করে থাকে। এদের রয়েছে প্রখর দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি যার দ্বারা এরা সিংহ বা অন্য হিংস্র প্রাণীর আগমন বহু দূর থেকেই টের পায়। হিংস্র প্রাণী কর্তৃক ধাবিত হলে এরা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ঘন্টায় ৭০ কিমি বা প্রায় ৪৪ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। পৃথিবীতে দুই পা বিশিষ্ট প্রাণীদের মধ্যে এরাই সর্বাপেক্ষা বেশি দ্রুতগ্রামী।

দৌড়ানোর সময় এদের দুই পাখাকে “রাডার” হিসাবে ব্যবহার করে বলে এরা দ্রুত এদের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। এ সময় লম্বা এক পদক্ষেপে এরা ১০-১৫ ফিট (৩-৫ মিটার) দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। ভূমিতে বিচরণশীল প্রাণীদের মধ্যে উটপাখি হচ্ছে দ্বিতীয় দ্রুতগ্রামী প্রাণী। আক্রান্ত হলে এরা মাটিতে শুয়ে মাথা ও গলা এমনভাবে বিছিয়ে দেয় যে তখন দূর থেকে তা মাটির টিবির মতো মনে হয়। শত্রু থেকে রক্ষা পাবার জন্য এরা এদের পা ব্যবহার করে। পায়ের লাথিতে শত্রু আহত হয় এবং অনেক সময় তাদের মৃত্যুও ঘটতে পারে।

খাদ্য ব্যবস্থা উটপাখি প্রধানত তৃণলতা, ঘাস, দানাদার খাদ্য, ফল ও ফুল ভক্ষণ করে। অবশ্য এরা মাঝে-মধ্যে পোকা-মাকড়ও ভক্ষণ করে থাকে।
বাণিজ্যিকভাবে উটপাখি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পিলেটেড পোল্ট্রি খাদ্য খাওয়ানো হয়। দৈহিক বৃদ্ধি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খাদ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নিুরূপঃ
২০-২৪% ক্রুড প্রোটিন
১২-১৯% ক্রুড ফাইবার
১.২-২% ক্যালসিয়াম
০.৬-১.১% ফসফরাস
১০,০০০-১৫,০০০ আই ইউ/ কেজি ভিটামিন এ
১,৫০০-২,৫০০ আই ইউ/কেজি ভিটামিন ডি (ড্রাই ম্যাটারের ভিত্তিতে)
প্রজননের জন্য উটপাখির খাদ্যের ফর্মূলা একই তবে এই সাথে ক্যালসিয়াম ২.৮% হারে প্রদান করতে হয়।
পিলেটেড ফিডের সাথে সবুজ কচি শাক-সবজি সরবরাহ করতে হবে। এছাড়াও এদের খাদ্যের সাথে অতিরিক্ত ট্রেস ইলিমেন্টস্ সংযোজন করতে হয়।

উটপাখির মাংসের বৈশিষ্ট্য ১. এদের মাংসে ৩% এরও কম ফ্যাট থাকে।
২. মাংস সংগৃহীত হয় সাধারণত ঊরু, পা এবং পিঠ থেকে।
৩. ভূমিতে বিচরণশীল অন্যান্য প্রাণীদের থেকে এদের খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা অনেক উচ্চ মানের।
৪. এদের মাংসে যে ফ্যাট থাকে তা আনস্যাচুরেটেউ ফ্যাটি এসিড।

অন্যান্য প্রাণীর মাংসের তুলনায় উটপাখির মাংসে চর্বির পরিমাণ কম থাকায় তা দ্রুত রানড়বা করা যায়। এদের মাংসে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কম থাকাতে পুষ্টিবিদগণ উটপাখির মাংস গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মুরগির ন্যায় এরাও খাদ্য হজমের জন্য পাথরের টুকরা ভক্ষণ করে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক উটপাখির পাকস্থলীতে প্রায় ১ কেজি পাথর থাকে। এগুলো গিজার্ডে খাদ্য ভাঙ্গার জন্য ব্যবহৃত হয়। উটপাখি পানি ব্যতীত কয়েকদিন থাকতে পারে। এরা যে সমস্ত তৃণলতা গ্রহণ করে সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু পানি পেলে এরা পানি পান করে এবং ঘনঘন পানিতে স্নান করে।
উটপাখি তাপমাত্রার বিরাট ব্যবধান সহজেই সহ্য করতে পারে। এমনকি দিবা-রাত্রির ৪০০সে তাপের হেরফেরও এরা সহ্য করে থাকে। এরা এদের বিরাট পাখা দ্বারা পালকবিহীন দুই পাকে আবরিত করে রাখে যা তাপকে ধারণ করতে সহায়তা করে।

প্রজনন উটপাখি সাধারণত ২-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। স্ত্রী উটপাখি পুরুষের থেকে ৬ মাস আগেই প্রজননক্ষমতা প্রাপ্ত হয়। প্রজনন ঋতু শুরু হয় মার্চ অথবা এপ্রিলের পূর্বভাগে এবং তা সেপ্টেম্বরের আগেই শেষ হয়। অবশ্য এই প্রজনন প্রক্রিয়া ভূ-অঞ্চলভেদে পার্থক্য হয়ে থাকে। একটি এলাকার প্রধান পুরুষ উটপাখি ২ থেকে ৭টি স্ত্রী উটপাখির সমন্বয়ে গঠিত “হারেমের” কর্তৃত্ব গ্রহণের জন্য মুখ থেকে একজাতীয় ফোঁস ফোঁস শব্দ করতে থাকে। বিজয়ী প্রধান উটপাখি প্রতিটি স্ত্রী উটপাখির সাথে মিলিত হয় তবে এদের মধ্যে প্রভাবশালী একটি পুরুষ পাখি প্রধান একটি স্ত্রী উটপাখির সঙ্গে জোড়া বাঁধে।
পুরুষ উটপাখি ঘনঘন পাখা আন্দোলিত করে তার সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করে। এরপর তারা আড়ালে চলে যায় ও অনাহুত সকলকে বিতাড়িত করে।
সকল স্ত্রী উটপাখি একটি ৩০-৬০ সেমি (১২-২৪ ইঞ্চি) গভীর ও ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) প্রশস্ত সাধারণ গর্তের মধ্যে ডিম পাড়ে। পুরুষ পাখিই কর্তৃক এই গর্ত খোদিত হয়। হারেমের প্রধান উটপাখি সর্বপ্রথমে ডিম পাড়ে। এরপর ডিমে তা দেয়ার সময় সে অন্যান্যদের ডিমগুলো ফেলে দিয়ে অবশিষ্ট ২০টি ডিমে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) তা দেয়া শুরু করে। একটি ডিম গড়ে ১৫ সেমি (৫.৯ ইঞ্চি) লম্বা, ১৩ সেমি (৫.১ ইঞ্চি) প্রস্থ এবং ১.৪ কেজি (৩.১ পাউন্ড) ওজনের হয়ে থাকে। ডিমের খোসা পুরু ও চকচকে ক্রিম বর্ণের হয়ে থাকে। ডিমের উপরিভাগে গর্তের ন্যায় ছোট ছোট দাগ থাকে। উটপাখির ডিম সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হলেও তা অন্যান্য পাখির দৈহিক ওজনের অনুপাতে তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট। স্ত্রী উটপাখি দিনে এবং পুরুষ পাখি রাত্রে পর্যায় ক্রমে ডিমে তা দেয়। দিনের বেলা উটপাখির বাসা যেন চিহ্নিত না করা যায় সে জন্য স্ত্রী উটপাখি বালু দ্বারা নিজেকে বে−ন্ড করে এবং কৃষ্ণ বর্ণের পুরুষ পাখিকে রাতের অন্ধকারে প্রায়শ সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এভাবেই এরা শত্রু থেকে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখে। সাধারণত ৩৫-৪৫ দিন পর্যন্ত ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা ফুটে। পুরুষ পাখি বাচ্চাদেরকে খাদ্য খাওয়ানো শেখায় এবং এদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ করে। বাচ্চাদের বেঁচে থাকার হার খুব কম হয়। এদের শত্র“ হচ্ছে, হায়েনা, শিয়াল, শকুন ইত্যাদি।

খামারে বাচ্চা প্রতিপালন ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাদেরকে ঘরের মধ্যে প্রতিপালন করা প্রয়োজন। সদ্য ভূমিষ্ঠ বাচ্চাদেরকে ২৮-৩০০ সে তাপমাত্রায় রাখতে হয় এবং প্রথম সপ্তাহে দিনে ৩-৪ বার খাদ্য পরিবেশন করতে হয়। পরবর্তী ৩ সপ্তাহ রাত্রে ন্যূনপক্ষে ৩০০সে তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। বাচ্চা প্রতিপালন কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।
বাচ্চাদেরকে খাদ্যের সাথে ইসেনসিয়াল এমাইনো এসিড, প্রোটিন, এনার্জি ও ট্রেস ইলিমেন্টস্ সরবরাহ করতে হয়।

উটপাখির বাণিজ্যিক মূল্য ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে ৫০০০ বছর পূর্বে মেসোপোটেমিয়া ও মিশরে উটপাখির বহুল ব্যবহার প্রচলিত ছিল। রোমানরা উটপাখিকে খেলাধুলা ও মাংসের জন্য ব্যবহার করতো। এদের পালক দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান পরিচ্ছদ প্রস্তুত করা হতো এবং চামড়া নানা কাজে ব্যবহৃত হতো। এসব কারণে অতিরিক্ত শিকারের ফলে অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে এদের সংখ্যা দারুণভাবে হ্রাস পেতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পালকের ব্যবসাতে ভাটা পড়ে। এর পর পরবর্তী পর্যায়ে চামড়া ও পালকের জন্য বাণিজ্যিকভিত্তিতে উটপাখি পালন শুরু হয় এবং ১৯৭০ এর পর থেকে তা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। উটপাখির চামড়া খুব শক্ত বলে পরিচিতি। এদের মাংস স্বাদে চর্বিহীন গরুর মাংসের অনুরূপ। এতে চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুব কম এবং ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রণ উচ্চ মাত্রায় থাকে। কাঁচা মাংসের রং গাঢ় লাল বা লাল চেরী ফলের ন্যায় হয়ে থাকে যা গরুর মাংসের চেয়ে গাঢ় বর্ণের হয়।

কোনো কোনো দেশে মানুষ উটপাখির উপর চড়ে দৌড় প্রতিযোগিতার অংশ গ্রহণ করে। বিশেষ করে আফ্রিকাতে এ ধরনের ক্রীড়া মোটামুটি জনপ্রিয়। ঘোড়ার পিঠে মানুষ যেভাবে চড়ে অনেকটা অনুরূপভাবেই উটপাখিও চালিত হয় । উটপাখিকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটা কঠিন এবং এরা ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগ্রামী। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলিতে পর্যটকদের আকর্ষণ ও বিনোদনের জন্য “দি অস্ট্রিচ ফার্ম” উদ্বোধন করা হয়েছে যেখানে এ ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মিনিসোটা, আইওয়া ও কেন্টাকির বিভিনড়ব পার্কে উটপাখির দৌড়ের প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যেও এটা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

প্রাকৃতিকভাবে বিচরণশীল উটপাখির সংখ্যা বিগত ২০০ বছরে মারাত্নক হারে হ্রাস পেয়েছে তবে পৃথিবীর বিভিন্ন বড় দেশের খামার ও পার্কে যত্নের সাথে এদেরকে প্রতিপালন করা হচ্ছে।

উটপাখির মাংস, চামড়া ও পালক যেহেতু অত্যন্ত মূল্যবান এবং বিদেশে এ সবের কদর ও চাহিদা অত্যধিক সেহেতু বাণিজ্যিকভিত্তিতে তা পালন অত্যন্ত লাভজনক হবে। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে পোল্ট্রি, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদি প্রতিপালন অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই সাথে উটপাখি পালনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হলে এই খাত থেকেও প্রভূত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। উটপাখি অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণ এবং এদের জন্য খাদ্য খরচ বাবদ ব্যয়ও খুব বেশি নয়। এদের রোগ-ব্যাধিও খুব কম হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় এই পাখিকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে প্রতিপালনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
লেখক: ডাঃ এ এফ এম রফিকুল হাসান
তথ্যসূত্র: পোলট্রি, পশুসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘খামার’
samilinfo.blogspot.com

Sunday, January 13, 2013

(কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা: বিস্তারিত তথ্য) pigeon of bangladesh and maintenance

কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা: বিস্তারিত তথ্য



কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা

কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা


ভূমিকা

ইতিহাস থেকে জানা যায় বহু আদিকাল থেকে মানুষ কবুতর পালন করে আসছে। সে সময় মানুষ দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করতো। এছাড়াও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সংবাদ প্রেরণ, চিত্ত বিনোদন ও সুস্বাদু মাংসের জন্য কবুতরের বহুল ব্যবহার ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশেও প্রধানত মাংস ও চিত্ত বিনোদনের জন্য কবুতর পালন করা হয়ে থাকে।

কবুতর প্রতিপালনের প্রয়োজনীয়তা


কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। কবুতর বাড়ি ও পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ছাড়াও অল্প খরচে এবং অল্প ঝামেলায় প্রতিপালন করা যায়। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক হিসেবে সদ্যরোগমুক্ত ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রোগীর পথ্য হিসেবে কবুতরের মাংস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালন করছেন।

কবুতর প্রতিপালনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশে সাধারণত কবুতরকে মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু, বলকারক ও রোগীর পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা সাধারণ মানুষের নিকট অতি প্রিয়।

১। ন্যুনতম ব্যয়ে প্রতিপালন:

হাঁস-মুরগীর তুলনায় কবুতর পালন মোটেও ব্যয়বহুল নয়। স্বল্প পুঁজি, অল্প খরচ ও সীমিত স্থানে অতি সহজে কবুতর পালন করা যায়।

২। কবুতরের ঘর নির্মাণে ন্যুনতম ব্যয়:

গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে পারিবারিকভাবে কবুতর প্রতিপালন করা যায়। বাড়ির চালের বাড়তি অংশে কাঠ বা বাঁশের ঘর বা খোপের মতো করে দিলে এখানে আপনাআপনি কবুতর এসে বাসা বাঁধে এবং বংশবৃদ্ধি করে। এতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। এভাবে কবুতর প্রতিপালন করে অনেক পরিবার যেমন তাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে তেমনি অন্যভাবে নিয়মিত কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর প্রতিপালনেও সীমিত ব্যয় হয়। এদের ঘরের অধিকাংশই কাঠ ও বাঁশের তৈরি হয়ে থাকে। সর্বোপরি এজন্য খুব কম জায়গার প্রয়োজন হয়।

৩। ডিম ফোটার হার:

কবুতরের ক্ষেত্রে ডিম ফোটার হার ৯৮%, যা মুরগির ক্ষেত্রে প্রায়শ ৮০-৮৫% হয়ে থাকে। এদের ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর বা এজাতীয় কোনো ব্যয়বহুল যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না।

জেনারেশন বিরতি

স্বল্প বয়সে এদের পুনরুৎপাদন শুরু হয়। তাই একজন উৎপাদনকারী অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হতে পারে। একটি কবুতর সাধারণত বছরে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৬-১৮ দিন সময় লাগে।

কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য - Pigeon Diseases Treatment

কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য


কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য

কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য




আমাদের দেশে বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর সর্বাধিক জনপ্রিয়। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর পালন করা হয়- এর বাহ্যিক সৌন্দর্য্যগত দিকগুলোর কারণে। প্রাচীনকালে কবুতর পালন করা হতো চিঠি আদান প্রদানের কাজে। শোনা যায় প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহ তাঁদের বিভিন্ন ধরনের বার্তা প্রেবণের জন্য বেছে নিতেন কবুতরকে। এছাড়া, সারা পৃথিবী জুড়ে কবুতরকে ধরা হয় শান্তির দূত হিসেবে। এই কারণে,বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে কবুতরকে খাঁচামুক্ত করে উদ্বোধন করা হয়।

সবচেয়ে বড় কথা, কবুতর পালন করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না। কবুতরকে সহজেই পোষ মানানো যায়। বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ কিংবা কার্নিশের মত ছোট বা অল্প জায়গাতে ও কবুতর পালন করা যায়। এমনকি ছাদের সাথে ঝুড়ি ঝুলিয়ে ও কবুতর পালন করা যায়।এই কারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করা যায়।
কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক বিশেষজ্ঞরা বলেন, কবুতরের মাংসে সাধারণ অন্যান্য পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের পরিমান বেশি। ফলে আমিষের পাশাপাশি প্রটিনের বাড়তি চাহিদা পূবণের জন্য ও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে। বানিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই অল্প সময়ে এটাকে লাভ জনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড়া করাতে পেরেছেন। কবুতর সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাস করে। প্রতি জোড়ায় একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী কবুতর থাকে। এরা ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। যতদিন বেঁচে থাকে_ ততদিন এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা প্রজনন করে থাকে।ডিম পাড়ার পর স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরই পর্যায়ক্রমে উক্ত ডিমে তা দিয়ে থাকে। কবুতরের কোন জোড়া হঠাৎ ভেঙে গেলে সেই জোড়া তৈরি করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়।নতুন জোড়া তৈরি করার জন্য স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরকে একঘরে কিছুদিন রাখতে হয়।

কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধা সমুহ

কবুতর পালন করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণ বেশি। পরবর্তীতে কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো।

(১) সাধারনত একটি ভাল জতের কবুতর বছরে ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে। এই ডিম গুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়।

(২) গৃহপালিত অন্যান্য পাখির মধ্যে কবুতরকে পোষ মানানো বা লালন করা যায়।

(৩) খুবই অল্প জায়গায় কবুতর লালন পালন করা যায়। এমনকি ঝোলানো ঝুড়িতেও কবুতর পালন করা সম্ভব। লালন পালনে কম জায়গা লাগে বলে কবুতর পোষায় খরচের পরিমাণ একেবারেই কম।

(৪) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর নিজের খাবার নিজেই খুঁজে নিয়ে থাকে। এই কারণে কবুতরের খাবারের জন্য বাড়তি যত্ন বা খরচ খুব একটা হয় না বললেই চলে।

(৫) কবুতরের থাকার জায়গার জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনা, বা ছাদের ওপর কাঠের ঘর তৈরি করে অনায়াসেই কবুতর পালন করা যায়। প্রমাণ সাইজের ঝুড়িতে করে ও কবুতর পালন করা যায়।

(৬) একটি পূণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিম দেবার উপযোগী হতে ৫ থেকে ৬ মাস মসয় লাগে। এই অল্প সময় অতিক্রান্ত হবার পর থেকেই কবুতর বছরে প্রায় ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম। ২৬ থেকে ২৮ দিন বয়সেই কবুতরের বাচ্চা খাবার উপযোগী হয়ে থাকে বা এই বাচ্চাকে বাজারজাত করা যায়। সাধারণত কবুতরের বাচ্চা রুগীর পথ্য হিসেবেও অনেকে বেছে নেন।

(৭) কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেই বাচ্চা সাধারণ নিয়মে ফুটে থাকে। এই বাচ্চা আবার পরবর্তী ৫ থেকে ৬ মাস পরে নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু করে।ফলে কবুতর বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের সংখ্যা।

(৮) কবুতরের মাংস প্রচুর চাহিদা রয়েছে।কারণ, কবুতরের মাংস খুবই সুস্বাদু ও বলকারক। তাছাড়া, বাজারের অন্যান্য মাংসের যোগান থেকে কবুতর কিছুটা সস্তাতে ও পাওয়া যায়।

একটি খুব ভালো প্রজাতির কবুতর লালন করলে পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সেই জোড়া থেকে কয়েক জোড়া কবুতর পাওয়া খুব বেশি আর্শ্চযজনক বিষয় নয়। এই কবুতরকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ, কবুতর লালন-পালনের খরচ খুব একটা নেই। এমনকি কবুতরের রোগ ব্যাধি কম হয়। কবুতরের থাকার জায়গা নির্বাচনে ও অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না। এই কারণে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কবুতর পালন অবশ্যই লাভজনক।

ধারাবাহিক ভাবে কবুতর তার বংশবৃদ্ধি করে বলে অনেকেই আজকাল কবুতর পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।মুরগির মাংসের বিকল্প হিসেবে কিংবা অতিথি পাখির বিকল্প হিসেবে অনেকেই কবুতরের মাংস বেছে নিয়ে থাকেন।

কবুতর পালন (kobutor palon)

                                                   বিসমিল্লাহিররহ্মানিররহিম

                                              কবুতর পালন নিয়া একটি ধাবাহিক ব্লগ
কবুতর একটি এমন পাখি যাকে সবাই খুব ভালভাসে। তাই কবুতর মানুষ লালন পালন করে। কবুতর পালন করতে হলে মোটামটি কবুতর সম্পরকে জ্ঞানের দরকার হয়। কবুতর সম্পরকে ভাল জ্ঞান থাকলে এর থাকা ভাল টাকা ইনকাম করা সম্ভব। বর্তমানে বহু মানুষ কবুতর পালন করে আল্লাহর ইচ্ছায় সাবলম্ভি হয় উঠেছে। আমার সাথে থেকে আপনিও হতে পারেন তাদের মধ্যে একজন। কথা না বাড়িয়া আমরা বিভিন্ন কবুতর সম্পরকে জানব। চলুন শুরু করা যাক আল্লাহর নামে।



কবুতরের প্রকারভেদঃ আমাদের দেশে ২ ধরেন কবুতর পাওয়া যায়।


দেশি কবুতর Bangladeshi pigeon দেশি কবুতর বলতে আমরা আমাদের দেশের কবুতর বুঝি। যেমনঃ ঘোলা কবুতর,জালালি কবুতর।

           দেশি কবুতরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার সময়ঃ দেশি কবুতরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সময় লাগে "১৫ থেকে ১৬" দিন আল্লাহর ইচ্ছায়।
                  দেশি কবুতরের খাবারঃ দেশি কবুতরের খাদ্য হল "গম, ধান,রেজা,ভুট্টা" ইত্যাদি।


২-বিদেশি কবুতর (fancy pigeon): বাংলাদেশের ছাড়া অন্য যে কোন দেশের কবুতরকে বিদেশি কবুতর বলে। যেমনঃ লক্ষা,শিরাজি,মেকপাই, শট পিস, ইত্যাদি।

                 বিদেশি কবুতরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার সময়ঃ এটা কবুতরের উপর ভিত্তি করে। সাধারনত ২১ দিন লাগে।
                 দেশি কবুতরের খাবারঃ দেশি কবুতরের খাদ্য হল "গম, ধান,রেজা,ভুট্টা,ছোলা,ডাবলই" ইত্যাদি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার সাথে থাকুন পরবর্তী পোস্ট পাওয়ার জন্য।

কবুতর পালন ও আধুনিক কৃষি

কবুতর পালন ও  আধুনিক কৃষি  kobutor palon কৃষি নয়, আধুনিক কৃষি এই ব্রত নিয়ে আমাদের যাত্রা। আর কৃষি বিপ্লের জন্য চাই পর্যাপ্ত ...