Wednesday, February 21, 2018

কবুতর পালন ও আধুনিক কৃষি

কবুতর পালন ও  আধুনিক কৃষি 


kobutor palon
kobutor palon



কৃষি নয়, আধুনিক কৃষি এই ব্রত নিয়ে আমাদের যাত্রা। আর কৃষি বিপ্লের জন্য চাই পর্যাপ্ত তথ্য, আমরা মনে করি শুধু মাত্র সঠিক, শুদ্ধ এবং গবেষনালব্ধ তথ্যই পারে এ দেশে আমাদের স্বপ্নের প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক কৃষিকে বেগবান করতে। আমাদের কৃষক সমাজ আজও পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যাবহার এখনো চোখে পড়ার মত তেমন কোন অগ্রগতি লাভ করেনি। তবে কৃষিতে গবেষনা যে চলছে না তা কিন্তু নয়, গবেষনা হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং আমাদের দেশের অনেক যোগ্য ও প্রতিথযশা গবেষকরা গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভাল ফল ও পাচ্ছেন কিন্তু যা হচ্ছে না, তা হল প্রচার।

কোন কোন ক্ষেত্রে গবেষনার ফলাফল জার্নাল বা পাবলিকেশানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। আমরা চাচ্ছি আমাদের গবেষকদের এই অর্জনগুলো তৃনমুল পার্যায়ে পৌছে দিতে। কৃষি কাজে আধুনিক ধ্যান-ধারনা, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যাবহার এবং জমিতে বীজ, সারসহ অন্যান্য উপদানের সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের সন্নিবেশন করার চেষ্টা করা হয়েছে আমাদের এই ওয়েব সাইটে। দেশের মানুষের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নের জন্য তাদেরকে জমিভিত্তিক চাষবাসের পাশাপাশি মৎস্য চাষ, গবাদি পশু ও পাখি পালনেও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিষয় ভিত্তিক তথ্যের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে।

শুধু উৎপাদন নয়, উৎপাদিত পন্য যেন ভাল বাজারদর পায় সে জন্য আমরা প্রচলিত বাজার ব্যবস্থা থেকে একটু ভিন্নরকম কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে প্রচলিত ভার্চুয়াল বাজার ব্যবস্থার উদ্যেগ গ্রহন করেছি। আমদের বিশ্বাস উক্ত বাজারে আপনাদের স্বতফূর্ত অংশগ্রহন আমাদের দেশের ই-কৃষিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে এবং কৃষি পন্য বিপনন ভিত্তিক ই-কমার্সের ভীত রচনা হবে, যার মাধ্যমে পরবর্তীতে আমাদের উৎপাদিত পন্য দেশের বাইরে পাঠানো আরো সহজতর হবে। শিক্ষিত তরুন সমাজকে কৃষিতে আগ্রহী করার নিমিত্তে উক্ত সেক্টরের সফল ব্যাক্তিদের সাফল্যগাথাঁ প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে।


আমরা চাচ্ছি আমাদের মেধাবী তরুনরা শুধু চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষিতে অবদান রাখুক, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করুক, কৃষি ব্যাবসা বানিজ্যে মেধা খাটিয়ে সমাজে ব্যাবসায়ী হিসাবে আত্নপ্রকাশ করুক। তাই কৃষি শিল্পে কিছু করার আগ্রহ নিয়ে যারাই চিন্তা-ভাবনা বরছেন, তারা আমাদের সাথে নিসোংকোচে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা আপনাদেরকে সহায়তা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি।

Sunday, February 18, 2018

কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা (kobutor palon,bangladeshi kobutor) Part - 4

কবুতরের রোগ বালাইঃ



কবুতরের রোগ বালাই

কবুতরের রোগ বালাই



বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু দ্বারা কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত খাদ্য এবং পানির মাধ্যমে জীবাণু কবুতরের দেহে প্রবেশ করে। তাছাড়া অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডাজনিত পীড়নের কারণেও অনেক সময় কবুতর দূর্বল ও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। কবুতরের সংক্রামক রোগ এবং ছত্রাকজনিত রোগ এছাড়া ভিটামিন বা খনিজ লবণের অভাব জনিত রোগ, বদহজম জনিত সমস্যা, গেঁটেবাত, অন্তঃপরজীবি যেমন কৃমি এবং বাহ্যিক পরজীবি যেমনঃ মাছি, উকুন ইত্যাদি দ্বারাও কবুতর আক্রান্ত হতে পারে।


রাণীক্ষেতঃ এ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কবুতর থেকে সুস্থ কবুতরে এ রোগের জীবাণুর বিস্তার ঘটে। এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ১০ ভাগ। সবুজ ডায়রিয়া এবং প্যারালাইসিস ইত্যাদি এ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। কবুতরকে জীবিত বা মৃত টিকা প্রয়োগ এবং খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।


ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস: অসুস্থ কবুতরের বমির সাহায্যে এ সংক্রামক রোগ খামারের অন্যান্য সুস্থ কবুতরে বিস্তার লাভ করে। এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৪০-১০০ ভাগ। দূর্গন্ধযুক্ত বাদামী বা সবুজ ডায়রিয়া, ঝিমানো, খাবারে অনীহা, শুকিয়ে যাওয়া, বমি করা এবং হঠাৎ মারা যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এ রোগের কোন চিকিৎসা না থাকার দরুণ আক্রান্ত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে ফেলাই রোগের বিস্তার রোধ এবং প্রতিরোধের প্রধান উপায়।


বসন্তঃ সাধারণত শরীরের পালকবিহীন অংশ যেমন- চোখ বা মুখের চারিদিক, পা ইত্যাদি জায়গায় এ রোগের ফোষ্কা বা গুটি দেখা যায়। আক্রান্ত কবুতরের চোখের পাতা ও চোখ ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, (conjunctivitis) এবং পানি পড়ে। আক্রান্ত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে উৎপনড়ব হওয়া ফোষ্কা বা গুটিগুলোকে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার করে আয়োডিন যৌগ যেমনপভিতে সপ বা আয়োসান দিয়ে মুছে দিতে হবে। কোন চিকিৎসা না থাকার দরুণ খামারের জৈবনিরাপত্তা রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়।


সালমোনেলোসিসঃ আক্রান্ত পিতামাতা থেকে ডিমের মাধ্যমে এবং খাবার, পানি, খামারে ব্যবহৃত বিভিনড়ব যন্ত্রপাতি, কর্মরত শ্রমিক ও আগত অন্যান্য লোকজন, খাদ্য সরবরাহের গাড়ি, বন্যপ্রাণী যেমন ইদুঁর ইত্যাদির মাধ্যমে খামারে এ সংক্রমক রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটে। শতকরা ৫-৫০ বা তারও বেশী কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত কবুতরের ডায়রিয়া, শুকিয়ে যাওয়া, পা এবং পাখায় প্যারালাইসিস এবং ডিম পাড়ার সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। আক্রান্ত কবুতর খামার থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।


এসপারজিলোসিসঃ আক্রান্ত কবুতর থেকে শ্বাস প্রশ্বাস মাধ্যমে সুস্থ কবুতর আক্রান্ত হতে পারে। এ ছত্রাকজনিত রোগে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। শ্বাস কষ্ট, ঝিমানো, শুকিয়ে যাওয়া, খাবারের প্রতি অনীহা, ওজন কমে যাওয়া এবং ঘন ঘন পিপাসা পাওয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। কার্যকরী ছত্রাক বিরোধী ঔষধ যেমন Amphotericine দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। রোগ প্রতিরোধের জন্য আক্রান্ত কবুতর খামার থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে এবং খামারের জৈবনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।


রক্ত আমাশয়ঃ বিভিন্ন প্রজাতির প্রটোজোয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। সংক্রামিত খাবার, পানি বা লিটার থেকে মুখের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। রক্ত মিশ্রিত ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্ধা এবং ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি এ রোগের প্রধান লক্ষণ। রোগ প্রতিরোধের জন্য আক্রান্ত কবুতর কার্যকরী জীবাণুনাশক দিয়ে শেড ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং কঠোর জৈবনিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।


ক্যাঙ্কারঃ আক্রান্ত বয়ষ্ক পিতামাতা কবুতর থেকে দুধের মাধ্যমে বাচ্চায় প্রটোজোয়া এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত জীবিত কবুতর সারাজীবন এ রোগের জীবাণু বহন করে। মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। আক্রান্ত  কবুতর অস্থির থাকে, পাখা উশকু-খুশকু হয়ে যায়, খাদ্য গ্রহণ কমে যায় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারা যায়। আক্রান্ত কবুতরের মুখের চারিদিকে সবুজাভ বা হলুদ লালা লেগে থাকে। আক্রান্ত কবুতরকে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। এই রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

কবুতর পালনে আর্থিক লাভঃ
৩০ জোড়া উন্নত বা সৌখিন জাতের কবুতর পালনে প্রাথমিকভাবে ১,৯৫,২০০ /- টাকা বিনিয়োগ করে এক বৎসরে ১,০৫,৩০০ /- টাকা লাভ করা যায়। তবে ৩০ জোড়া দেশী জাতের কবুতরের পালনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ৫,৪০০ /- টাকা বিনিয়োগ করে এক বৎসরে ৪,৬০০/- টাকা লাভ করা যায়। পরবর্তীতে স্থায়ী খরচের (ঘর, পানি পাত্র, বালতি, মগ, কবুতরের খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড) দরকার হয় না । ফলে পরবর্তীতে লাভ বেশী হয়।

কবুতর পালন অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ -Low Investment in Pigeon and Befit More

কবুতর পালন অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ -Low Investment in Pigeon and Befit More  



কবুতর পালন অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ

কবুতর পালন অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ



আমাদের দেশে হাঁস-মুরগির মতো অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করা হয়ে থাকে। এখনও পুরনো পদ্ধতিতে কবুতর পালন করা হচ্ছে। তবে ইদানীং জনসাধারণের মাঝে উন্নত পদ্ধতিতে কবুতর পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। বসতবাড়িতে অল্প শ্রমে ও স্বল্প ব্যয়ে অবসর সময়ে কবুতর পোষা যায়। কবুতর পুষে একদিকে পরিবারের আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়, অপরদিকে বাড়তি আয়েরও সুযোগ হয়। বাচ্চা কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও বলকারক হওয়ায় বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।





জীবন চক্র : পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর জোড়া বেঁধে একসঙ্গে বাস করে। এদের জীবনকাল ১২ বছর। স্ত্রী-পুরুষ উভয় মিলে খড়কুটা সংগ্রহ করে ছোট জায়গায় বাসা তৈরি করে। ডিম পাড়ার স্থান ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে স্ত্রী কবুতর ডিম পাড়া শুরু করে। এরা ২৮ দিন অন্তর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ (দুই)টি ডিম দেয় এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত দেয়া ডিমে বাচ্চা উত্পাদান ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটতে ১৭-১৮ দিন সময় লাগে। ডিমে তা দেয়ার ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরের খাদ্য থলিতে দুধ জাতীয় বস্তু তৈরি হয় যা খেয়ে বাচ্চারা ৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর উভয়েই ১০ দিন পর্যন্ত এদের বাচ্চাকে ঠোঁট দিয়ে খাওয়ায়, এরপর বাচ্চারা দানাদার খাদ্য খেতে আরম্ভ করে।


কবুতর পালন অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ

কবুতর পালন অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ


কবুতরের জাত : পৃথিবীতে প্রায় দুশ’ থেকে তিনশ’ জাতের কবুতর আছে। মাংস উত্পাদনের জন্য সিলভারকিং, হামকাচ্চা, ডাউকা, কাউরা, গোলা, গোলী, পক্কা, লক্ষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চিত্তবিনোদনের জন্য ময়ুরপঙ্খী, সিরাজী, লাহোরী, ফ্যানটেইল, জেকোডিন, মুক, গিরিবাজ, টেম্পলারলোটন—এসব জাতের কবুতর রয়েছে। এছাড়াও আমাদের দেশে উল্লেযোগ্য কবুতরের একটি জাত হচ্ছে ‘জালালী কবুতর’। এ নামটি হজরত শাহ্জালাল (রহ.) এর পুণ্য স্মৃতির সঙ্গে জড়িত।


পালনের সুবিধা : কবুতর পালন আনন্দদায়ক। কবুতরের গোশত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রতিমাসে গড়ে ২টি বাচ্চা পাওয়া যায় এবং ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়। তাদের রোগবালাই কম। খাবার করচ কম এবং থাকার ঘর তৈরি করতে খরচ কম লাগে। স্বল্প পুঁজি ও শ্রমে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।


কবুতরের বাসস্থান : কবুতরের থাকার ঘরটি উঁচু করে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখিদের নাগালের বাইরে থাকে। ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হালকা কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং কাঠ দিয়ে কবুতরের ঘর বানানো যায়। প্রতিজোড়া কবুতরের জন্য ৩০ সেমি. চওড়ার এবং উচ্চতায় ৩০ সেমি. মাপের খোঁপ বানাতে হবে। কবুতরের ঘর পাশাপাশি বা কয়েকতলা বিশিষ্ট করা যেতে পারে। প্রতিটি খোপের জন্য একটি করে দরজা থাকবে। অধিক কবুতর পুষলে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকটি খোপ বেশি রাখতে হবে। প্রতিমাসে ১-২ বার করে ঘরে কবুতরের বিষ্টা পরিষ্কার করতে হবে এবং যাতে কবুতরের ঘর পরিষ্কার ও শুকনো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবার ও পানির পাত্র কবুতরের ঘরের কাছেই রাখতে হবে। এছাড়াও কবুতরের গোসলের জন্য পানি ও ধূলি এবং বাসা বানানোর জন্য খড়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।


খাদ্য : কবুতর সাধারণত গম, মটর, খেসারি, সরিষা, ভুট্টা, কলাই, ধান, চাল, কাউন, জোয়ার—এসব শস্যদানা খেয়ে থাকে। এরা মুক্ত আকাশে বিচরণ করে এবং পছন্দমত স্থান থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির জন্য এদের খাবারের শতকরা ১৫ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ আমিষ থাকা প্রয়োজন। তবে মুরগির জন্য নির্ধারিত তৈরি সুষম খাবার খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি কবুতর দৈনিক গড়ে ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খেয়ে থাকে। কবুতর ছানার দ্রুত বৃদ্ধি, হাড়শক্ত ও পুষ্টি এবং বয়স্ক কবুতরে সুস্বাস্থ্য এবং ডিমের খোসা শক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের চূর্ণ, চুনাপাথর, শক্ত কাঠকয়লার চূর্ণ, হাড়ের গুঁড়ো, লবণ এসব মিশিয়ে ‘গ্রিট মিকচার’ তৈরি করে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়াও প্রতিদিন কিছু কিছু কাঁচা শাক-সবজি কবুতরকে খেতে দেয়া ভালো।


খরচ : ১০ জোড়া কবুতরের জন্য ১টি ঘর বানাতে (খাবারের পাত্র, পানির পাত্রসহ) আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জোড়া কবুতরের ক্রয়মূল্য প্রায় ১০০০ টাকা এবং ১০ জোড়া থেকে মাসে প্রায় ৮ থেকে ৯ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে। এগুলো বিক্রি করে মাসে গড়ে ৬০০ টাকা আয় করা যাবে

pigeons breeds (কবুতরের জাত)

কবুতরের জাত


কবুতরের জাত

কবুতরের জাত



বহুবিচিত্র ধরনের নানা জাতের কবুতর রয়েছে। আমাদের দেশে ২০ টিও অধিক জাতের কবুতর আছে বলে জানা যায়। নিম্নে প্রধান কয়েকটি জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১। গোলা
এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা আপনাআপনি এখানে এসে বসবাস করে। এদের বর্ণ বিভিন্ন সেডযুক্ত ধূসর এবং বারড-ব্লু রংয়ের। এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রং লাল বর্ণের হয়।

২। গোলী
গোলা জাতের কবুতর থেকে গোলী জাতের কবুতর ভিন্ন প্রকৃতির। এ জাতের কবুতর পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। এদের লেজের নীচে পাখার পালক থাকে। ঠোঁট ছোট হয় এবং পায়ে লোম থাকে না। এদের বর্ণ সাদার মধ্যে বিভিন্ন ছোপযুক্ত।

৩। টাম্বলার
এসব জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজী খায় বলে এদের টাম্বলার বলে। আমাদের দশে এই জাতটি গিরিবাজ নামে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর রয়েছে।

৪। লোটান
লোটন কবুতরকে রোলিং (rolling) কবুতরও বলা হয়। গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজী খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজী খায়। সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘুরানো ঝুঁটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত।

৫। লাহোরী
আমাদের দেশে এই কবুতরটি শিরাজী কবুতর হিসেবে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল লাহোর। এদের চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ, বুক, পেট, নিতম্ব, পা ও লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক এবং পাখা রঙ্গীন হয়। সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী ইত্যাদি বর্ণের কবুতর দেখা যায়।

৬। কিং
কিং জাতের কবুতরের মধ্যে হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনী এবং স্কোয়াব (ঝয়ঁধন বাচ্চা) উৎপাদনে ব্যবহার হয়। এছাড়াও রয়েছে ব্লু রেড এবং ইয়েলো কিং। এই জাতের কবুতর মূলত প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়।

৭। ফ্যানটেল
এটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর। ফ্যানটেল জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে। এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে বলে এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয়। এদের রং মূলত সাদা তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেল সৃষ্টিও সম্ভব হয়েছে। এদের লেজের পালক বড় হয় ও উপরের দিকে থাকে। পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয় এবং দেশ বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

৮। জ্যাকোবিন
এই কবুতরের মাথার পালক ঘাড় অবধি ছড়ানো থাকে যা বিশেষ ধরনের মস্তকাবরণের মত দেখায়। এদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এদের আদি জন্মস্থান ভারত বলেই ধারণা করা হয়। এই কবুতর সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী বর্ণের হয়। এদের দেহ বেশ লম্বাটে। চোখ মুক্তার মত সাদা হয়।

৯। মুকি
এ জাতের কবুতরের গলা রাজহাঁসের মত পিছন দিকে বাঁকানো এবং কম্পমান অবস্থায় থাকে। মুকি জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে বলে ধারণা করা হয়। এদের উভয় ডানার তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না। এ জাতের কবুতরের মাথা সাদা, বুক খুব একটা চওড়া নয় তবে উঁচু ও বেশ কিছুটা সামনের দিকে বাড়ানো থাকে। সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরের পায়ে লোম থাকে না।

কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য (kobutor palon) Part - 3


কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য Part-1

কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য Part-2


পিজিয়ন মিল্ক


কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য
কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য



কবুতরের খাদ্যথলিতে পিজিয়ন মিল্ক উৎপাদিত হয়। এই খাদ্য থলিতে দু’টি অংশ বা লোব (ষড়নব) থাকে। ডিমে তা দিতে বসার প্রায় অষ্টমদিন থেকে “পিজিয়ন মিল্ক” উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এন্টিরিত্তর পিটুইটারী গ্রন্থির প্রোল্যাকটিন (Prolactin) হরমোনের প্রভাবে এই ‘ পিজিয়ন মিল্ক’ উৎপন্ন হয়। এ কারণে কবুতর ছানার জন্য কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। কারণ প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত ছানা তার মাতা-পিতার কাছ থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত খাবার পেয়ে থাকে। এটিকে পিজিয়ন মিল্ক বা কবুতরের দুধ বলা হয়। পিজিয়ন মিল্ক হলো পৌষ্টিক স্তরের কোষের মধ্যে চর্বির গুটিকা (globules of fat) যা পিতা মাতা উভয়ের খাদ্য থলিতে যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ হয়। পিজিয়ন মিল্ক কবুতর ছানার জন্য একটি আদর্শ খাবার। এতে ৭০% পানি, ১৭.৫% আমিষ, ১০% চর্বি এবং ২.৫% বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে। মাতাপিতা উভয় কবুতরের খাদ্য থলির অভ্যন্তরীণ আবরণ থেকে পিজিয়ন মিল্ক উৎপন্ন হয়। কবুতরের জিহ্বা লম্বা ও সরু। মুখ গহ্বরের নীচের অংশ বেশ প্রশস্ত হয় যা ছানাকে খাওয়ানোর উপযোগী। মাতা ও পিতা কবুতর ছানার মুখের মধ্যে মুখ প্রবেশ করিয়ে খাবার সরাসরি অন্ননালীতে পৌছে দেয়।

কবুতরের ঘর

আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামে টিন বা খড়ের চালা ঘরের কার্ণিশে মাটির হাড়ি অথবা টিন বেঁধে রেখে কবুতর পালনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কাঠের তৈরি ছোট ছোট খোপ তৈরি করেও কবুতর পালা হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলে, কয়েক জোড়া কবুতরের ঘর করে এক জোড়া কবুতর পালন করলে কয়েক দিনের মধ্যে বাকী ঘরগুলোতে নতুন জোড়া কবুতর এসে বাসা বাঁধে। কবুতর পোষা খুব সহজ এবং লাভজনক তা বলাই বাহুল্য। অল্প-পরিসরে যা বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালনের জন্য অবশ্যই সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। নিম্নে কবুতরের ঘর বা খোপ তৈরির বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ আলোচনা করা হলো।

স্থান নির্বাচনঃ কবুতরের খামারের জন্য উঁচু ও শুষ্ক সমতল ভূমি থাকা প্রয়োজন।

ঘরের উচ্চতাঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বেজী ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘর নাগালে না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর উঁচু করতে হয়। এ উদ্দেশ্যে কাঠ বা বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।

ঘরের পরিসরঃ প্রতি এক জোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর থাকা প্রয়োজন। এক জোড়া কবুতর যাতে ঘরের ভিতর স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে ফিরতে পারে তা লক্ষ্য রেখে ঘর নির্মাণ করতে হবে।

স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থাঃ কবুতরের ঘর বা খোপ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন সেখানে পোকা-মাকড়, কৃমি, জীবাণু ইত্যাদির উপদ্রব কম থাকে এবং ঘর সহজেই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা যায়।

সূর্যালোকঃ ঘরে যাতে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ সূর্যের আলো যেমন পাখির দেহে ভিটামিন-ডি সৃষ্টিতে সাহায্যে করে তেমনি পরিবেশও জীবাণুমুক্ত রাখে।

বায়ু চলাচলঃ কবুতরের ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ দূষিত বাতাস বা পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে পাখির স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।

কবুতরের খাদ্য

হাঁস-মুরগির ন্যায় কবুতরের খাদ্যে শ্বেতসার, চর্বি, আমিষ, খনিজ ও ভিটামিন প্রভৃতি থাকা প্রয়োজন। কবুতর তার দেহের প্রয়োজন এবং আকার অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। প্রতিটি কবুতর দৈনিক প্রায় ৩০-৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে। কবুতর প্রধানত গম, মটর, খেশারী, ভুট্টা, সরিষা, যব, চাল, ধান, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেয়ে থাকে। মুক্ত অবস্থায় পালিত কবুতরের জন্য সকাল-বিকাল মাথা পিছু আধ মুঠ শস্যদানা নির্দিষ্ট পাত্রে

খাদ্য উপাদান পরিমাণ (%)
ভুট্টা ৩৫
মটর ২০
গম ৩০
ঝিনুকের গুঁড়া/চুনাপাথর চূর্ণ/অস্থিচূর্ণ ০৭
ভিটামিন/এমাইনো এসিড প্রিমিক্স ০৭
লবণ ০১

মোট = ১০০

রেখে দিলে প্রয়োজন মত তারা খেতে পারবে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিম্নে প্রদত্ত খাদ্য মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম।

কবুতরের খাদ্য তালিকা

এই সাথে কবুতরের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। এক পাত্রে কবুতরের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও অন্য পাত্রে প্রয়োজন মত পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি রাখতে হবে।
কবুতরের শারীরবৃত্তিক তথ্যাদি
* দেহের তাপমাত্রা = ৩৮.৮-৪০০ সে
* দৈহিক ওজন = (ক) হালকা জাতঃ ৪০০-৪৫০ গ্রাম
(খ) ভারী জাতঃ ৪৫০-৫০০ গ্রাম
* পানি পান = (ক) শীতকালঃ ৩০-৬০ মিলি প্রতিদিন
(খ) গ্রীষ্মকালঃ ৬০-১০০ মিলি প্রতিদিন
* খাদ্য গ্রহণ = ৩০-৬০ গ্রাম প্রতিদিন (গড়)
* ডিম ফুটানোর সময়কাল = ১৭-১৮ দিন।

কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা Primary Knowledge of Pigeon Pet Part 1

ভূমিকা:

পৃথিবীতে প্রায় ১২০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ২০ প্রকার কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বত্র এসকল কবুতর রয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ু এবং বিস্তীর্ণ শষ্যক্ষেত্র কবুতর পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পূর্বে কবুতরকে সংবাদ বাহক, খেলার পাখি হিসাবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এটা পরিবারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হচেছ। এদের সুষ্ট পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রতিপালন করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা যায়।

কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা
কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা

কবুতরের জাতঃ

মাংশ উৎপাদনকারী
রেসিং
ফ্লাইং
শোভাবর্ধনকারী
দেশী
ক) কিং- সাদা, কালো,
সিলভার, হলুদ ও নীল
ক) রেসিং
হামার
ক) বার্মিংহাম রোলারক) মালটেজক) সিরাজী
খ) কারনিউখ) হর্স ম্যান খ) ফ্লাইং টিপলার/ ফ্লাইং হোমারখ) ক্যারিয়ার খ) জালালী
গ) মনডেইন- সুইস, ফ্রেন্স
গ)থাম্বলারগ) হোয়াইট ফাউন্টেলগ) বাংলা
ঘ) আমেরিকান জায়ান্ট হোমার
ঘ) কিউমুলেটঘ)টিম্বালারঘ) গিরিবাজ
ঙ) রান্ট
 ঙ) হর্স ম্যানঙ) পোটারস্‌ঙ) লোটন



 চ) নান্সচ) বোম্বাইছ) গোবিন্দ
দেশী এবং মাংশ উৎপাদনকারী কবুতর বাংলাদেশের সর্বত্র পালন হয়ে থাকে যা পরিবারের পুষ্টি সরবরাহ করে তবে রেসিং, ফ্লাইং এবং শোভাবর্ধনকারী কবুতর শখের বসে বা বানিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করে থাকে।

কবুতর পালনের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলীঃ

প্রাপ্ত বয়ষ্ক কবুতরের দৈহিক ওজন (জাতভেদে) ২৫০-৮০০ গ্রাম, প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার সময়কাল ৫-৬ মাস, কবুতর প্রতিবার ১ জোড়া ডিম দেয় (প্রথম ডিম দেয়ার প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর দ্বিতীয় ডিম দেয়), বাচ্চা উৎপাদনের বয়সকাল ৫-৬ বৎসর, ৪-৫ দিনে বাচ্চার চোখ ফোটে, ১৭-১৯ দিন বাচ্চা ফোটার জন্য ডিমে তা দেয়, ১০-১২ দিনে পালক গজায়, ২৮-৩০ দিন বাজারজাতকরণের বয়স, জীবনকাল ১৫-২০ বৎসর।

কবুতর পালনের সুবিধাঃ





  • বিনিয়োগ কম, প্রতিপালন অত্যন্ত সহজ এবং সংক্ষিপ্ত প্রজননকাল
  • বেকার যুবক এবং দুঃস্থ মহিলাদের আয় বর্ধনের উৎস হতে পারে
  • অল্প জায়গায় এবং অল্প খাদ্যে পালন করা যায় এবং রোগ বালাই কম
  • মাংস মুস্বাদু পুষ্টিকর, সহজে পাচ্য এবং প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পুরণের উৎস
  • মল জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যায়.

  • কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা Primary Knowledge of Pigeon Pet Part 2


    কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা - Kobutor Palon Part 2


    কবুতর পালন


    পড়তে ক্লিক করুন এখানে 

    কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা
    কবুতর পালনের প্রাথমিক ধারণা

    কবুতরের বাসস্থানঃ

    উত্তম নিষ্কাশন, পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং বায়ুচলাচল আছে এরূপ উঁচু এবং বালুময় মাটিতে কবুতরের ঘর করতে হবে, যা খামারীর আবাসস্থল থেকে ২০০-৩০০ ফুট দুরে এবং দক্ষিণমূখী হওয়া উচিত। মাটি থেকে ঘরের উচ্চতা ২০-২৪ ফুট এবং খাচার উচ্চতা ৮-১০ফুট হওয়া ভাল। একটি খামারের জন্য ৩০-৪০ জোড়া কবুতর আদর্শ। এরূপ ঘরের মাপ হবে ৯ ফুট ৮.৫ ফুট। কবুতরের খোপ ২-৩ তলা বিশিষ্ট করা যায়। এরূপ খোপের আয়তন প্রতিজোড়া ছোট আকারের কবুতরের জন্য ৩০ সে. মি.x ৩০ সে.মি.x ২০ সে.মি. এবং বড় আকারের কবুতরের জন্য ৫০ সে. মি.x ৫৫ সে.মি. x৩০ সে.মি.। ঘর স্বল্প খরচে সহজে তৈরী এবং স্থানান্তরযোগ্য যা কাঠ, টিন, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরী করা যায়। খামারের ভিতরে নরম, শুষ্ক খড়-কুটা রেখে দিলে তারা ঠোঁটে করে নিয়ে নিজেরাই বাসা তৈরী করে নেয়। ডিম পাড়ার বাসা তৈরীর জন্য ধানের খড়, শুকনো ঘাস, কচি ঘাসের ডগাজাতীয় দ্রব্যাদি উত্তম। খোপের ভিতর মাটির সরা বসিয়ে রাখলে কবুতর সরাতে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফুটায়।

    খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ

    বাচ্চা ফোটার ৪-৫ দিন পর কবুতরের বাচ্চার চোখ ফোটে। ফলে বাচ্চাগুলো কোন দানাদার খাদ্য গ্রহণ করতে পারেনা। এসময় স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর তাদের পাকস্থলী (ক্রপ) থেকে ঘন ক্রীম বা দধির মত নিঃসরণ করে যাকে কবুতরের দুধ বলে। এ দুধ অধিক আমিষ, চর্বি এবং খনিজ লবণ সমৃদ্ধ যা এক সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে পারে। বাচ্চাগুলো নিজে খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্ত্রী এবং পুরুষ কবুতর উভয়ে দানাদার খাদ্যের সাথে দুধ মিশিয়ে ঠোঁট দিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়।
    • কবুতরের জন্য তৈরীকৃত খাদ্য শর্করা, আমিষ, খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন, চর্বি এবং খনিজ লবণ সমপন্ন সুষম খাদ্য হতে হবে। কবুতর ম্যাশ বা পাউডার খাদ্যের তুলনায় দানাদার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে।
    • ছোট আকারের কবুতরের জন্য ২০-৩০ গ্রাম, মাঝারী আকারের জন্য ৩৫-৫০ গ্রাম এবং বড় আকারের জন্য ৫০-৬০ গ্রাম খাদ্য প্রতিদিন দিতে হবে। দানাদার জাতীয় খাদ্যের মধ্যে গম, ধান, ভূট্টা, সরগম, ওট শতকরা ৬০ ভাগ এবং লেগুমিনাস বা ডাল জাতীয় খাদ্যের মধ্যে সরিষা, খেসারী, মাটিকলাই শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ সরবরাহ করতে হবে।
    • কবুতরের ভিটামিন সররাহের জন্য বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন ছাড়া সবুজ শাকসবজি, কচি ঘাস সরবরাহ করা প্রয়োজন।
    • প্রতিদিন ২ বার খাদ্য সরবরাহ করা ভাল। মাঝে মাঝে পাথর, ইটের কণা (গ্রিট) এবং কাঁচা হলুদের টুকরা দেয়া উচিৎ কারণ এ গ্রিট পাকস্থলীতে খাবার ভাঙতে এবং হলুদ পাকস্থলী পরিষ্কার বা জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
    • কবুতরের ডিম দেয়ার সময় গ্রিট মিশ্রণ বা খনিজ মিশ্রণ, ডিম এবং ডিমের খোসা তৈরী এবং ভাল হ্যাচাবিলিটির জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এই খনিজ মিশ্রণ বোন মিল (সিদ্ধ) ৫%, ঝিনুক ৪০%, লাইম স্টোন ৩৫%, গ্রাউন্ড লাইম স্টোন ৫%, লবণ ৪%, চারকোল ১০% এবং শিয়ান রেড ১% তৈরী করতে হবে  ।

    পানি সরবরাহঃ

    প্রতিদিন গভীর বা খাদ জাতীয় পানির পাত্র ভালভাবে পরিষ্কার করে ৩ বার পরিষ্কার পরিচছন্ন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা উচিত। দুই সপ্তাহ পর পর পটাশ মিশ্রিত পানি সরবরাহ করলে পাকস্থলী বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।

    রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাঃ


    খামার হতে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার এবং রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ন।
    ১। কবুতর উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানুনাশক (০.২-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
    ২। সুস্থ্য সবল কবুতর সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে কবুতরকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কবুতরের মুখ এই দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে। অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে।
    ৩। কবুতরের খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং কবুতর বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
    ৪। খামারে মানুষের এবং বন্য পাখি ও ইঁদুর জাতীয় প্রাণী যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিবার খামারে প্রবেশ করার পূর্বে এবং খামার হতে বাহির হওয়ার সময় হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
    ৫। কোন কবুতর অসুস্থ হলে দ্রুত আলাদা করে ফেলতে হবে। অসুস্থ বা মৃত কবুতর এর রোগের কারণ জেনে অন্যান্য জীবিত কবুতরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।


    টিকা প্রদানঃ


    খামারে রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবুতরের প্রজননকালীন সময়ে প্যারেন্ট কবুতর গুলোকে রাণীক্ষেত রোগের মৃত টিকা প্রয়োগ করা উত্তম। টিকা প্রয়োগের কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পর বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করতে হবে। তবে বাচ্চা কবুতর উড়তে শেখার সাথে সাথেও টিকা প্রয়োগ করা যায়। জীবিত বা মৃত উভয় টিকাই প্রয়োগ করা যায়। জীবিত টিকা চোখে এবং মৃত টিকা চামড়ার নীচে বা মাংসপেশীতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম টিকা (জীবিত) প্রয়োগের কমপক্ষে ১৪ দিন পর দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ দিতে হবে।



    কবুতর পালন ও আধুনিক কৃষি

    কবুতর পালন ও  আধুনিক কৃষি  kobutor palon কৃষি নয়, আধুনিক কৃষি এই ব্রত নিয়ে আমাদের যাত্রা। আর কৃষি বিপ্লের জন্য চাই পর্যাপ্ত ...